শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

মুজিব ও রাষ্ট্রন্নেছা

একাত্তরের জুলাই মাস। নওয়াপাড়ার হিন্দুদের বাড়িগুলো এখন রাজাকারদের দখলে। ওদের চক্ষুলজ্জা ও ভয়- আর অবশিষ্ট নেই। এখন মুক্তিকামী মুসলমান বাড়িগুলোর উপরও শ্যেনদৃষ্টি ফেলা শুরু করেছে। স্বাধীনতাকামী সকলেই আজ শংকিত ও বিপদগ্রস্থ। যেসব বাড়ি থেকে দু’একজন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে তাদের আজ মহাতংক। সেই মহাতংক বিরাজ করছে প্রফেসর আরজের বিশাল বাড়িটিতেও। প্রফেসরের বড়ভাই মিরাজ টের পান, ক্রমান্বয়ে পাকি দালালদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বর্বরোচিত আচরণ বেড়েই যাচ্ছে। যে কোন মূহুর্তে অকাজ-কুকাজ তারা ঘটিয়ে ফেলতে পারে! সেই দুর্ভাবনায় আল্লাহ আল্লাহ করে কেটে যাচ্ছে তাঁদের দিন। টানা দেড় মাস যাবত আরজও নেত্রকোণা কলেজ থেকে বাড়ি আসার সুযোগ পাননি।

১৬ জুলাই ভোরবেলা। মিরাজের ঘর আলো করে ভূমিষ্ট হলো এক পুত্রসন্তান। আতংক, বেদনা ও শংকার মাঝেও সবার হৃদয়ে দোলা দিলো নতুন আনন্দের। কারণ, এ শিশুই হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে এই পরিবারের প্রথম সন্তান। সকলেরই ভাবনা- ছেলেটির সুন্দর নাম রেখে আকীকা সম্পন্ন করা। কিন্তু আরজ ছাড়া যথার্থ নামটি রাখবে কে?
ডেকে আনা হলো আরজের বাল্যবন্ধু জব্বারকে। যেতে হবে নেত্রকোণায়। আরজকে দেখেও আসবে, আবার সন্তান জন্মের খবরটিও দিয়ে আসবে। প্রসূতি সিরাজুন্নেছা এ সুযোগে আরজের কাছে চিঠি লিখতে শুরু করেন-
প্রিয় ভাইসাব,
আসসালামু আলাইকুম! আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। জেনে খুশী হবেন যে, আল্লাহর রহমতে আমাদের ঘর আলো করে আরো একজন পুত্রসন্তান জন্মগ্রহন করেছে। ও দেখতে একেবারে আমার শ্বশুরবাবার মতো। আপনাকে না পেয়ে পুরো আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত। শ্বাশুড়িমা’র চাপে আপনার ভাই আগের নামগুলোর সাথে মিলিয়ে ওর নাম রেখেছেন- নূরুল ইসলাম। জানিনা এ নাম আপনার পছন্দ হবে কিনা। কিন্তু আমরা এখনো অপেক্ষায়, বরাবরের মতো আপনার কাছ থেকে সুন্দর একটি নাম পাবার আশায়। এপ্রিলে আপনি রাজ্জাকের মেয়েটির নাম ‘রাষ্ট্রন্নেছা’ রাখাতে ধারণা হচ্ছে- বাড়িতে থাকলে হয়তো এ নামটিও অন্যরকম রাখতেন।
আরেকটি কথা। প্রায়শই আপনার পাঠানো লোকজন আমাদের বাড়িতে অবস্থান করে। তারপর ছদ্মবেশে ভারতের দিকে চলে যায়। গ্রামের দু’একজন এবং জহরগাঁও ও কাঁটাখালির কিছু ভিক্ষুক- তালাশী নজরে এসব খেয়াল করে। মেহমানদেরকে নিয়ে নানান প্রশ্ন করে। আপনি এসব বিষয়ে আরো সতর্ক থাকবেন। দেশের অবস্থা ভয়াবহ! সবসময় দুঃশ্চিন্তায় থাকি। সময়-সুযোগে বাড়িতে আসবেন। জয় বাংলা! ইতি-
আপনারই ভাবী,
সিরাজুন্নেছা
১৯-০৭-৭১


জব্বার দুপুরের ট্রেনেই নেত্রকোণায় যাত্রা শুরু করবেন। পাজামার উপর তিনি পড়েছেন শর্ট-পাঞ্জাবী। অভ্যাস না থাকলেও- নিরাপত্তার স্বার্থে মাথায় লাগিয়েছেন জিন্নাহ টুপি। তারপরেও চিঠিটিকে পাঞ্জাবির পকেটের বদলে আন্ডারওয়্যারের গুপ্ত পকেটে পুরে নিয়েছেন। কারণ, ইদানীং চিঠিপত্র চেক করেও পাকিবাহিনী বহু লোকজনকে হত্যা করছে। আল্লাহ আল্লাহ জঁপে গোধূলি লগ্নে তিনি পৌঁছে যান- নেত্রকোণা কলেজের প্রফেসর’স মেসে।
জব্বারকে দেখেই আরজ আনন্দে লাফিয়ে উঠেন। যার সাথে তাঁর আবাল্যকালের সখ্যতা। বাড়ির সাথে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যম ওই। বাড়ির সবকিছু এখনো অক্ষত জেনে- আরজ আল্লাহর কাছে শোকর গোজার করতে থাকেন। জব্বার আন্ডারওয়্যারের গুপ্তপকেট থেকে চিঠিটি বের করে আরজের হাতে ধরিয়ে দেন। চিঠির প্রথমাংশ পড়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেও, দ্বিতীয়াংশ পড়ে চিন্তিত হয়ে বলতে থাকেন- জব্বার, আমাদের বাড়িতে লোকজন গেলে- কারা খোঁজ-খবর নেয়? কারা জিজ্ঞাসাবাদ করে?
- প্রথমত, তোমার প্রতিবেশীরা; দ্বিতীয়ত, জহরগাঁও ও কাঁটাখালির দু’তিনটি ভিখারিণী। এরা সামিদ-আনছর মেম্বারের গোয়েন্দা। নেপথ্যে শান্তি-কমিটির চেয়ারম্যান সেতাব আলী। এখন হিসাবটা মিলাও।
আরজ ভেবে দেখেন- ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে তরুণ-যুবারা মেঘালয়ের ইউথ-ক্যাম্পে যেতে পেরেছে। নিজেই তো কয়েকবার অনেককে মেঘালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু ২৯ এপ্রিল দুর্গাপুরে পাকি মিলিটারিরা আস্তানা গাড়ার পরে রাজাকারদের মতিগতি বদলে যায়! ফলে ভারতে যাওয়া ঝুঁকিবহুল হয়ে দাঁড়ায় দূরবর্তী তরুণ-যুবাদের জন্য। তাদেরই জন্যে আশ্রয়, খাবারের ব্যবস্থা এবং রাস্তাঘাটের দিকনির্দেশনামূলক সহায়তা করে যাচ্ছিলেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাড়ির উপর নজরদারীর খবরে ভীষণ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ তিনি! যারা গোয়েন্দাগিরি করাচ্ছে- তারা স্বাধীনতা-বিরোধী এবং পুরনো শত্রু! এমতাবস্থায় সিদ্ধান্তে পৌঁছেন- বিকল্প হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ের জন্যে তিনি দেবেন তাঁর ঘনিষ্টজনদের ঠিকানা। নৈশভোজের পর আরজ জব্বারকে বলেন, শোন, আমাদের বাড়িতে যেহেতু গোয়েন্দাগিরি চলছে, তাই আমরা এবং আশ্রয়প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা- উভয়ই এখন প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে! তাই বলে আমাদের কাজ বন্ধ রাখলে চলবে না। এখন থেকে কেউ আশ্রয় খুঁজলে- আমি তাদেরকে জয়নাল, আমোদালী, আবুল মেম্বার, সাবেদ মোড়ল, আশুবাবু, ফজলু তালুকদার এবং তোর বাড়ির ঠিকানা দেবো। কারণ, তোমরা সকলেই আশ্রয়প্রার্থীদেরকে নিশ্চিত সহযোগিতা করবে।
- প্রফেসর, তোমার বিশ্বাসের কেউই অমর্যাদা করবেনা। তুমি ভাবীর চিঠির উত্তর লিখে রাখো। আমি সকালের ট্রেনেই রওনা দেবো।
আরজ প্যাডটি নিয়ে লিখতে শুরু করেন-
শ্রদ্ধেয়া ভাবী,
আসসালামু আলাইকুম! বিভীষিকাময় দুঃসময়ে আমাদের আরেকটি বাবার জন্ম হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত, কলেজ ত্যাগ করা শিক্ষকদের পক্ষে অসম্ভব। নাহলে আমি জব্বারের সাথেই চলে আসতাম। মা এবং ভাইকেও বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন। আমি আপনাদেরকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত! শত্রুরা কখন কী করে বসে- সে দুঃশ্চিন্তা আমার যায়না! ভাইকে বলবেন সাবধানে থাকতে। বিশেষ করে রাতে ওনাকে অন্য বাড়িতে ঘুমাতে বলবেন। লোকজন পাঠানোর ব্যাপারে আমাকে সতর্ক করার জন্যে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। আমাদের বাড়ির বিকল্প হিসেবে জব্বারকে কিছু পরামর্শ দিয়ে দিয়েছি। আশাকরি আর কোন সমস্যা হবেনা।
ভাবী, আপনাদের নবাগত সন্তানের নাম- ভাই ‘নূরুল ইসলাম’ রেখেছেন, তা খুবই সুন্দর। আগের নামগুলোর সাথে এটির চমত্কার মিল! আবার, এটাও সত্যি বলেছেন যে, আমি বাড়িতে থাকলে এ নামটিই অন্যরকম হতে পারতো। ধন্যবাদ জানাচ্ছি- এবারও আমাকে একটি নাম রাখার দায়িত্ব দেয়ার জন্যে। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে, বাঙালির চরম দুঃসময়ে, যে নামটি রাখা যুক্তিযুক্ত, তার কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করছি-

পাকিস্তান শাসনামলের শুরু থেকে শেষাবধি যে রাজনীতিবিদ বাঙালির মনের কথাটি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করতে পেরেছেন- তিনি হচ্ছেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির দুর্দিনের কান্ডারি, পথের দিশা, শান্তি, প্রগতি ও মুক্তির অগ্রদূত। তিনি ধাপে ধাপে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে, চৌষট্টির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে, চেষট্টির ছয়দফা প্রনয়ণে, ঊনসত্তুরের গণ-অভ্যুত্থানে, সত্তুরের নির্বাচনের মহাবিজয়ে এবং মার্চে মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনায় এবং স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ঘোষনায়- যে সাহসিকতা, বিচক্ষণতা, অবিচলতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ন্যায়পরায়ণতা, আপোসহীনতা, আত্মত্যাগ, অধিকারবোধ ও জাতীয়তাবোধের জন্ম দিয়ে সাত কোটি বাঙালিকে যেভাবে জাগিয়ে তুলেছেন- বিশ্বে তা নজীরবিহীন!
সমকালীন রাজনীতিকদের চিন্তার বিরুদ্ধ স্রোতে থেকেই- তিনি স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশের। তিনি আপামর মানুষের প্রিয়নেতা। বাঙালির মুক্তির জন্যে যিনি জীবন-যৌবনের মূল্যবান একযুগ কাটিয়ে দিয়েছেন কারাগারের প্রকোষ্টে। তিনি রাজনীতির কবি। যার ডাকে স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির জন্যে- যুদ্ধ করি লাখে লাখে!
রাজনীতি যার কাছে ‘বাঙালি’ আর ‘বাংলাদেশ’, দর্শন যার বিশ্বজনীন নৈতিকতা আর মানবতা, হৃদয় যার কুসুম-কোমল, চেহারা যার দীপ্তিময়, ভালবাসায় যিনি অকপট, ভাষণে যিনি যাদুকর, তিনি আমাদের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!
তিনি এখনো অজানা কারাগারের প্রকোষ্টে। জীবন তাঁর অনিশ্চিত! তাঁর আদর্শ, চেতনা, আর শুভ নাম ধরে রাখতে হবে বাংলার ঘরে ঘরে। এক মুজিবকে ওরা কারাগারে পুড়েছে, কিন্তু লক্ষ মুজিব আজ বাংলার ঘরে ঘরে। ‘মুজিব’ এক অবিনাশী নাম! তাই, আমি বাংলাদেশে জন্ম নেয়া- এই সন্তানের নাম রাখলাম ‘মুজিব’। এরাই যুগে যুগে বাঁচিয়ে রাখবে বঙ্গবন্ধুকে, বাংলাদেশকে।

আশাকরি নামটি শুনে খুশী হবেন। এই নাম রাখার বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে বলবেন। তাতেই আমার চিন্তা-ভাবনা সার্থকতা পাবে। আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনা করে ও দোয়া চেয়ে ইতি টানলাম। জয় বাংলা!
সালামের সংগে,
আরজ আলী
২১/৭/১৯৭১

 

ডিএসএস/ 

Header Ad
Header Ad

গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতভর আহমেদাবাদ ও সুরাট শহরে যৌথ বাহিনীর এই অভিযান চালানো হয়। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভির নির্দেশে পরিচালিত এই অভিযানে আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ৮৯০ জন এবং সুরাট থেকে ১৩৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে পুরুষ, নারী ও শিশুরাও রয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি সতর্ক করে বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুরাট পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রঘবেন্দ্র ভাটস জানান, আটককৃতদের পরিচয় যাচাইয়ের কাজ চলছে এবং যাচাই শেষে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

গুজরাট সরকারের এই অভিযান দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছে।

Header Ad
Header Ad

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলাবাসীর গলার কাঁটা মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি। গোনা ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় আশির দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধটি বছরের পর বছর স্থায়ী ভাবে সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে বাঁধটির প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় ছিলো।

গত ২০২২সালে প্রথমবারের মতো বাঁধের অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ কিছু অংশ মেরামত করা হলেও বর্তমানে পুরো অংশটিই খুবই নাজুক। অবশেষে সেই নাজুক অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ।

সুত্রে জানা, পূর্বে বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা নদীতে যখনই পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হতো তখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা ছোটাছুটি শুরু করতো আর যখন নদীতে পানি থাকে না তখন বাঁধটি মেরামত কিংবা সংস্কার করার কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হতো না। একাধিকবার ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। এমন অবস্থা থেকে মুক্ত হতে জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্দ্যোগে বর্ষার আগেই সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন জনবান্ধব কর্মকান্ডে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অন্তত এবার নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হওয়ার শঙ্কা নিয়ে রাত কাটাতে হবে না বলে জানিয়েছে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত বাসিন্দারা।

রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ( পিআইও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ওই বেড়িবাঁধের কৃষ্ণপুর আলাউদ্দিনের জমি থেকে বেলালের জমি পর্যন্ত সাড়ে ৪০০ ফিট আর বেলালের জমি থেকে রফিকুলের জমি অভিমুখে ৪২৬ ফিট মোট ৮২৬ ফিট বাঁধের বিপরীত অংশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে এই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। পূর্বে ওই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের উপরের বিভিন্ন অংশের প্রস্থ ছিলো গড়ে ৬ থেকে ১০ ফিটের মধ্যে যা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের মাধ্যমে মাটি দিয়ে বাঁধের উপরের অংশের প্রস্থ ২৪ ফিট আর নিচের অংশের প্রস্থ করা হচ্ছে ৫০ ফিট যা নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হলে ভেঙ্গে যাওয়ার কোন ভয় থাকবে না। সার্বক্ষণিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। বেড়িবাঁধের এমন সম্প্রসারণ কাজের কারণে দুই উপজেলার মানুষরা বাঁধ ভেঙ্গে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া বন্যার কবল থেকে রেহাই পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান ইতিমধ্যেই কৃষ্ণপুর নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ২৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয় জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিত ভাবে বেড়িবাঁধের প্রশস্তকরণ কাজ চলমান রেখেছে। আশা রাখি এমন কাজে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সুফল পাবেন।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষনের কারণে ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধের ঝ’কিপূর্ণ স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতো। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের যে কোন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলের জমি তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকতো। বিভিন্ন সময় ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে অস্থায়ী ভাবে বাঁধের মেরামত করা হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী ছিলো না। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই প্রতিবছরই বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিতো। এমন সমস্যার স্থায়ী সমাধাণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঝ’কিপূর্ণ বাঁধটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বর্ষা মৌসুমের আগেই বেড়িবাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ স্থায়ী ভাবে মেরামত ও সংস্কার করার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মাসের শুরু থেকে বেড়িবাঁধের নদীর বিপরীত পাশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

এই কাজের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের নদীর ভিতরের অংশে জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর মাধ্যমে সংস্কার করছে যাতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ কোন অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, যে কোন উন্নয়ন মূলক কাজে স্বচ্ছ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা থাকা জরুরী। ছোট যমুনা নদীর মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি শুধু দুই উপজেলার নয় পুরো জেলার জন্যও গলার কাটা ছিলো। সেই বাঁধে বার বার অর্থ খরচ না করে এবার জরুরী অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই স্থায়ী ভাবে মেরামতের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে এবার আর বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের মানুষদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। ধারাবাহিক ভাবে এই বাঁধসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিয়ে স্থায়ী ভাবে সংস্কার/মেরামত করা হবে বলেও তিনি জানান।

Header Ad
Header Ad

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

বিভিন্ন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্টেশন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার মেট্রোরেল চালু করা হবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫