শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র

প্রতিদ্বন্দিতাতামূলক নির্বাচন: নির্বাচন মানেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রতিদ্বন্দিতা বা প্রতিযোগিতামূলক তথা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। একজন ভোটারও যদি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হন তবে সেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিখুঁত বলা যাবে না। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারা এবং স্বচ্ছভাবে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রতিযোগিতামূলক তথা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল ইসলামের মতে, ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বাইরে অন্য কিছু ভাবার কোনো অবকাশ নেই এবং যে আইন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমিশনের হাত বেঁধে দেয়, তা সাংবিধানিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হবে’ (কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ, তৃতীয় সংস্করণ, পৃ. ৯৭৩)। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধনপ্রাপ্ত সবগুলো দল অংশগ্রহণ করেছিল। সব দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে একটি আশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপঞ্জি সে আশায় গুড়েবালি ঢেলে দেয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনসমূহের একটিতেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি।

নির্বাচনগুলোতে ভোটার অনুপস্থিতিও ছিল উল্লে খ করার মতো। নির্বাচন একদিনের বিষয় নয়, এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে, নির্বাচনী প্রচারণা, এজেন্ট নিয়োগ, ভোটারদের ভোট প্রদান, নির্বাচনী বিরোধ নিরসন পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের সমান সুযোগ না থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় না। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার জন্য সব দলের অংশগ্রহণ প্রাথমিক শর্ত হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অংশগ্রহণমূলক হলে অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয় না। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং কোনো প্রার্থী বা দল বিশেষ সুবিধা লাভ করে না।

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে ফলাফল যে কারও পক্ষেই যেতে পারে, যা পুরোপুরি প্রার্থীদের ভোটারদের সমর্থন আদায়ের উপর নির্ভর করে। যেসব নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সেগুলোতে ভোট পড়ার হারও বেশি হয়। পক্ষান্তরে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে বা একতরফা হলে ভোটাররাও ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। একাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী নির্বাচনগুলো যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে ভোটারদের সামনে প্রার্থী বেছে নেওয়ার অর্থপূর্ণ বিকল্প থাকে, ফলে ভোটারদের প্রদত্ত ভোট নির্বাচনের ফলাফলের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পারে।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু মানদণ্ড রয়েছে। জাতিসংঘের ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’, ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নসহ (আইপিইউ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডগুলো হলো: (১) সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমসুযোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন একটি আইনী কাঠামো থাকা, (২) ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ায় যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের ভোটার হতে পারা; (৩) যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী তাদের প্রার্থী হতে পারা; (৪) ভোটারদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প প্রার্থী থাকা; (৫) নির্বাচনী এলাকার সীমানা কতগুলো মানদণ্ডের ভিত্তিতে সঠিকভাবে নিধারিত হওয়া; (৬) জেনে-শুনে-বুঝে সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের সামনে যথাযথ তথ্য থাকা; (৭) ভোটারদের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারা; (৮) অর্থ কিংবা সহিংসতার মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা; (৯) ভোট গননা সঠিকভাবে হওয়া; (১০) নির্বাচনী বিরোধ দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে মীমাংসিত হওয়া; সর্বোপরি (১১) ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়া।

সাংবিধানিক কাঠামো: ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। শেষ পর্যন্ত একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বভাবতই সদ্য স্বাধীনতা লাভ করা দেশে প্রণীত সংবিধানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে (১১ অনুচ্ছেদ)। পাশাপাশি সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন নামে একটি পরিচ্ছেদ রাখা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা, কমিশনের ক্ষমতা, দায়িত্ব ইত্যাদির বিধান রাখা হয় (১১৮-১২৬ অনুচ্ছেদ)।

নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, এজন্য কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের অধীনমুক্ত রেখে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি কমিশনাররা কাজ করতে গিয়ে যেন সরকার কর্তৃক অপসারিত হওয়ার ভয়ে না থাকেন, সেজন্য কমিশনারদের অপসারণের বিধান সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ন্যায় একই পদ্ধতিতে রাখা হয়েছে। ২ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্ত এসব সাংবিধানিক বিধিবিধান সত্তে¡ও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছিল। সব ক্ষমতাসীন সরকারই আপ্রাণ চেষ্টা থাকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে নিজেদের পক্ষে আনার। এমতাবস্থায় নব্বইয়ের গণআন্দোলন পরবর্তী সব দলের ঐকমত্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। বস্তুত তত্ত্বািবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা বা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

নির্বাচনকালীন কোনো দলীয় সরকারের প্রভাব না থাকায় সকল রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার সমসুযোগ সৃষ্টি হয়। নির্বাচন হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্ট নতুন সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত হয়দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অল্প কিছু অভিযোগ থাকলেও সব দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়। এরপর ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে দিয়ে নির্দলীয় সরকারকে নিজেদের করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা চালায়।

পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়। এর আগে আদালত কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ২১ জুলাই ২০১০ সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারপারসন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারপার্সন করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ সংশোধনীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনা ও ১০৪ জন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিসহ সমাজের সকল স্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে ২৯ মে ২০১১ অর্থাৎ আদালতের ১০ মে ২০১১ তারিখের সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৯ দিন পর তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রেখে সংবিধান সংশোধনের একটি সর্বসম্মত সুপারিশ প্রণয়ন করে। পরদিন ৩০ মে ২০১১ তারিখে বিশেষ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর, ত্তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংবিধান সংশোধনের ঘোষণা দেয়। এরপর ৩১ মে বিশেষ সংসদীয় কমিটির কো- চেয়ারপার্সন ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবাদ সম্মেলন করে উচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখা সম্ভব হবে না বলে দাবি করেন, যা ছিল আদালতের রায়ের একটি ভয়াবহ অপব্যাখ্যা। একই দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীও আদালতের রায়ের একই অপব্যখ্যা প্রদান করেন।

পরবর্তীতে ৫ জুন ২০১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির প্রস্তাব করে বিশেষ সংসদীয় কমিটি তার সুপারিশ চূড়ান্ত করে, যার প্রেক্ষিতে ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়। সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ১৬ মাস পর ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য অসাংবিধানিক ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংসদ অনুমোদন করলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ্তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক ৩ সরকারব্যবস্থার অধীনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে সংসদের সম্মতির প্রয়োজন হবে, যা ছিল ২০১১ সালের ১০ মে তারিখের সংক্ষিপ্ত আদেশের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্য দুটি একত্রে পড়লে এটি সুস্পষ্ট হয় যে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়াতে কোনোরূপ বাধা ছিল না; বরং তা-ই ছিল আদালতের আদালতের অভিপ্রায়। বিচার বিভাগকে রেহাই দিবেন কি না? এটি আপনাদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ আদালত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়ে কে সরকারের প্রধান হবেন সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংসদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চূড়ান্ত রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা তা থেকে সরে আসেন এবং পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ মে ২০১১ তারিখে প্রদত্ত অপব্যাখ্যার অনুকরণে, সংসদের সম্মতির শর্ত জুড়ে দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে রায় পরিবর্তন ছিল বিচারকদের পক্ষ থেকে ফ্রড-অন-দ্য-কোর্ট বা আদালতের সঙ্গে জালিয়তি ও পেশাগত অসদাচারণ। পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক বৈধতা: সংবিধান হলো ‘উইল অব দ্য পিপল’ বা রাষ্ট্রের মালিক জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তির প্রতিফলন (অনুচ্ছেদ ৭(২))। বস্তুত একটি রাষ্ট্রের সংবিধান নাগরিকদের রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রতীক। তাই এতে পরিবর্তনের অর্থাৎ সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও এমন ঐকমত্য থাকা বাঞ্ছনীয়। আর এ ঐকমত্য অর্জিত হয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের ‘পার্টিসিপেশন’ বা অংশগ্রহণ এবং এর পাশাপাশি ‘ডেলিভারেশন’ বা সুচিন্তিত আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে। মূলত এ দুটি শর্ত অর্জিত হলেই সংবিধানের সংশোধনী ‘লেজিটিমেসি’ বা গ্রহণযোগ্যতা পায়।

বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

 

Header Ad
Header Ad

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলাবাসীর গলার কাঁটা মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি। গোনা ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় আশির দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধটি বছরের পর বছর স্থায়ী ভাবে সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে বাঁধটির প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় ছিলো।

গত ২০২২সালে প্রথমবারের মতো বাঁধের অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ কিছু অংশ মেরামত করা হলেও বর্তমানে পুরো অংশটিই খুবই নাজুক। অবশেষে সেই নাজুক অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ।

সুত্রে জানা, পূর্বে বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা নদীতে যখনই পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হতো তখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা ছোটাছুটি শুরু করতো আর যখন নদীতে পানি থাকে না তখন বাঁধটি মেরামত কিংবা সংস্কার করার কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হতো না। একাধিকবার ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। এমন অবস্থা থেকে মুক্ত হতে জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্দ্যোগে বর্ষার আগেই সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন জনবান্ধব কর্মকান্ডে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অন্তত এবার নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হওয়ার শঙ্কা নিয়ে রাত কাটাতে হবে না বলে জানিয়েছে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত বাসিন্দারা।

রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ( পিআইও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ওই বেড়িবাঁধের কৃষ্ণপুর আলাউদ্দিনের জমি থেকে বেলালের জমি পর্যন্ত সাড়ে ৪০০ ফিট আর বেলালের জমি থেকে রফিকুলের জমি অভিমুখে ৪২৬ ফিট মোট ৮২৬ ফিট বাঁধের বিপরীত অংশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে এই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। পূর্বে ওই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের উপরের বিভিন্ন অংশের প্রস্থ ছিলো গড়ে ৬ থেকে ১০ ফিটের মধ্যে যা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের মাধ্যমে মাটি দিয়ে বাঁধের উপরের অংশের প্রস্থ ২৪ ফিট আর নিচের অংশের প্রস্থ করা হচ্ছে ৫০ ফিট যা নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হলে ভেঙ্গে যাওয়ার কোন ভয় থাকবে না। সার্বক্ষণিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। বেড়িবাঁধের এমন সম্প্রসারণ কাজের কারণে দুই উপজেলার মানুষরা বাঁধ ভেঙ্গে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া বন্যার কবল থেকে রেহাই পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান ইতিমধ্যেই কৃষ্ণপুর নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ২৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয় জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিত ভাবে বেড়িবাঁধের প্রশস্তকরণ কাজ চলমান রেখেছে। আশা রাখি এমন কাজে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সুফল পাবেন।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষনের কারণে ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধের ঝ’কিপূর্ণ স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতো। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের যে কোন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলের জমি তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকতো। বিভিন্ন সময় ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে অস্থায়ী ভাবে বাঁধের মেরামত করা হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী ছিলো না। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই প্রতিবছরই বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিতো। এমন সমস্যার স্থায়ী সমাধাণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঝ’কিপূর্ণ বাঁধটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বর্ষা মৌসুমের আগেই বেড়িবাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ স্থায়ী ভাবে মেরামত ও সংস্কার করার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মাসের শুরু থেকে বেড়িবাঁধের নদীর বিপরীত পাশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

এই কাজের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের নদীর ভিতরের অংশে জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর মাধ্যমে সংস্কার করছে যাতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ কোন অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, যে কোন উন্নয়ন মূলক কাজে স্বচ্ছ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা থাকা জরুরী। ছোট যমুনা নদীর মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি শুধু দুই উপজেলার নয় পুরো জেলার জন্যও গলার কাটা ছিলো। সেই বাঁধে বার বার অর্থ খরচ না করে এবার জরুরী অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই স্থায়ী ভাবে মেরামতের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে এবার আর বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের মানুষদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। ধারাবাহিক ভাবে এই বাঁধসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিয়ে স্থায়ী ভাবে সংস্কার/মেরামত করা হবে বলেও তিনি জানান।

Header Ad
Header Ad

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

বিভিন্ন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্টেশন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার মেট্রোরেল চালু করা হবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

Header Ad
Header Ad

গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পাথর বোঝাই ট্রাকে অভিযান চালিয়ে ২৬ কেজি গাঁজাসহ ট্রাকটি জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় ওই ট্রাকের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার বিলকলমী সরকারপাড়া গ্রামের মৃত শহীদুল্লা সরকারের ছেলে ট্রাক চালক বিপুল সরকার (৩৫) ও হেলপার পাবনার সাথিয়া উপজেলার চিনানাড়ী গ্রামের আবু দাউদ আকাশ (২৫)।

শনিবার সকালে গাইবান্ধা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহ্-নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বুজরুক বোয়ালিয়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পাবনাগামী একটি পাথরবোঝাই ট্রাক থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ২৬ কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। পরে ট্রাকটিসহ গাঁজাগুলো জব্দ করা হয়। সেইসঙ্গে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করে হয়েছে বলেও জানান জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি