রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

শাহ সুজার তাহখানা

তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ

ইতিহাস তো আসলে গল্পই। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ের রাজা-বাদশাহদের গল্প। তবে পাঠ্যবইয়ে সেই ছেলেবেলা থেকে ইতিহাস বলতে আমরা যা পড়েছি, তা কেবল এই রাজা-বাদশাহদের যুদ্ধ জয়-পরাজয়, ক্ষমতায় আসা-যাওয়া, আর তাদের কিছু সৃষ্টির গল্প। কিন্তু গল্পের মাঝেও যে গল্প থাকতে পারে, মূল নায়কেরও যুদ্ধ জয় ছাড়াও কিছু সৃষ্টি থাকে, তেমনই একজন মানুষ ছিলেন শাহ সুজা। আর তারই এক সৃষ্টি হলো এই তাহখানা। চাঁপাইনবাবাগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় সোনামসজিদ পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সামান্য ভেতরে এর অবস্থান।

মোঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে যত কথাই বলা হোক না কেন, ক্ষমতার লোভ যে একজন মানুষকে কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর বানিয়ে ফেলতে পারে, তার বড় উদাহরণগুলি দেখা গেছিল এই সময়েই। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বর্তমান প্রশাসকের জ্যেষ্ঠ সন্তান তার পরে ক্ষমতায় বসবে, সেটিই নিয়ম। সেই সন্তান পুরুষ কী নারী, তাতে কিছু যায় আসে না। মোঘল আমলে জ্যেষ্ঠ সন্তান নারী হলে তাদের ক্ষমতায় আসার তো কোনো প্রশ্নই ছিল না, এমনকি পুত্র সন্তানদের মধ্যেও জ্যেষ্ঠত্ব নয়, বরং ছিল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ক্ষমতার লোভে বাবাকে আটকে রাখা বা ভাইদের খুন করা অসম্ভব ছিল না। প্রাণভয়ে অনেককে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। এমনই একজন ছিলেন শাহ সুজা।

মসজিদের দেয়ালে মোঘল স্থাপত্য নকশা

কে ছিলেন শাহ সুজা
মোঘল সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট ছিলেন শাহজাহান। তাজমহল সৃষ্টির জন্য আগ্রায় গিয়ে মানুষ এখনো তার নামই স্মরণ করে। শাহজাহান ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন ৩০ বছর। ১৬৫৮ সালে হঠাৎ তিনি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন। তার বয়স তখন ৬৬ বছর। তার ছিল চার ছেলে, চার মেয়ে। ছেলেরা ছিলেন দারাশিকো, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ। এর মধ্যে আওরঙ্গজেব ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত ও দুর্ধর্ষ। শাহজাহানের স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছে ছিল তার মৃত্যু পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোই হবেন পরবর্তীকালের সম্রাট। সেভাবেই তাকে আগ্রাতে রেখে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। বাকি তিন শাহজাদাকে সরিয়ে দেওয়া হয় দূরে। দ্বিতীয় পুত্র সুজাকে দেওয়া বাংলার ভাইসরয় পদ, আওরঙ্গজেবকে দেওয়া হয় দাক্ষিণাত্যের ভাইসরয় পদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র মুরাদকে দেওয়া হয় বালখ (বর্তমান আফগানিস্তান) অঞ্চলের ভাইসরয় পদ।

কিন্তু বাবার আশু মৃত্যু আশঙ্কা করে চার ছেলে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার দ্বন্দ্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমেই দ্বিতীয়পুত্র সুজা ক্ষমতা নেওয়ার জন্য বাংলা থেকে তার বিশাল সেনাবাহিনীসহ আগ্রা অভিমুখে নদীপথে যাত্রা করেন। কিন্তু বানারসে পৌঁছালে দারাশিকোর বাহিনীর কাছে তিনি পরাজিত হন। দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার পর সুজাকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার গভর্নর বানিয়ে দেওয়া হলে তিনি বড়ভাইয়ের আনুগত্য স্বীকার করে ঢাকায় ফিরে যান।

এই চুক্তির খবর পেয়ে আওরঙ্গজেব ছোট ভাই মুরাদের সঙ্গে চুক্তি করে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে দারাশিকোকে। এই যুদ্ধে দারাশিকো পরাজিত হলে প্রথমে তাকে আটক রাখা হয়, এরপর জেলখানায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর সিংহাসনে বসেন আওরঙ্গজেব। আবার এক সুযোগ বুঝে আওরঙ্গজেব মুরাদকেও এক হত্যাকাণ্ডে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয় এবং পরে হত্যা করে। এদিকে শাহজাহান সুস্থ হয়ে উঠলেও তাকে আর ক্ষমতায় ফিরতে দেননি আওরঙ্গজেব। বাবাকে বন্দি করা হয় আগ্রা দূর্গে। তবে বাবার একটি অনুরোধ তিনি রক্ষা করেছিলেন। যে কারণে ১৬৬৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ধরে কারাবাসে থেকেই জানালা দিয়ে শাহজাহান দূরে তাজমহল দেখতে পেতেন।

শাহ নেয়ামতউল্লাহ ওয়ালীর মাজার

এদিকে দুই ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর শাহ সুজা আবারও আওরঙ্গজেবকে পরাজিত করার জন্য আগ্রা অভিমুখে যাত্রা করে। কিন্তু উত্তর প্রদেশে পৌঁছালে আওরঙ্গজেবের চৌকষ সেনাপতি মীর জুমলার বাহিনীর কাছে আবার তিনি পরাজিত হন এবং বাংলায় ফিরে আসেন।

গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত। শাহজাদা সুজা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শাসন নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পারতেন। কিন্তু গল্প শেষ হয়নি। আওরঙ্গজেব ধারণা করে বসলেন সুজা যেহেতু দুইবার আগ্রা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, সুযোগ পেলেই আবার তাকে আক্রমণ করতে পারে। তাই সে সুযোগ না দিয়ে বরং তিনি মীর জুমলাকে আবার দায়িত্ব দিলেন সুজাকে বাংলায় গিয়ে পরাজিত করে মেরে ফেলবার জন্য। ইতোমধ্যে বারবার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সুজার অনেক সৈন্য মনোবল হারিয়ে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে গেছে। এতে তার বাহিনী আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মীর জুমলার বাংলা অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার বার্তা পাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েক বছর ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াতে হয় তাকে। এক সময় আর টিকতে না পেরে মোঘল সাম্রাজ্য ছেড়ে সদলবলে আরাকানে (বর্তমান মিয়ানমার) পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শাহ সুজা। ১৬৬১ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

তাহখানা কমপ্লেক্স
শাহ সুজার আমলে বাংলায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরান ঢাকার বড় কাটরা ও হোসেনী দালান এবং ধানমন্ডির ঈদ্গাহ মাঠ নির্মাণ করা হয়েছিল শাহ সুজার সময়ে। নিজে সুন্নি মুসলিম হলেও শিয়া মুসলিমদের প্রতিও তার মর্যাদার অভাব ছিল না। তারই নিদর্শন এই হোসেনী দালান। ঢাকার বাইরে একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই তাহখানা কমপ্লেক্স। তবে এর সুনির্দিষ্ট নির্মাণকাল নিয়ে দুইটি মতবাদ আছে। একদল মনে করেন সুজা তার আমলের শুরুর দিকে এটি নির্মাণ করেছিলেন, আরেকদল মনে করেন শেষকালে পালিয়ে বেড়ানোর সময় এখানে কিছুদিন অবস্থানকালে তিনি এটি নির্মাণ করেছিলেন।

তাহখানা একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ দাঁড়ায় শীতল ভবন। গৌড় সবসময়ই ছিল একটি চরম আবহাওয়ার অঞ্চল। এখানে শীতকালে যেমন প্রচণ্ড শীত, আবার গ্রীষ্মকালে থাকে অসম্ভব গরম। এই আবাসিক ভবনটির নির্মাণকৌশল এমনিই করা ছিল, যেন প্রাকৃতিক বাতাসের প্রবাহ ভবনের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে আরেকদিক দিকে বের হয়ে যেতে পারে, তবে ভেতরে জানালা, দরজা ও অতিরিক্ত কিছু দেয়াল এমনভাবে বসানো ছিল, যাতে বাতাস প্রবেশের সময় অতি গরম বা অতি শীতল যাই হউক না কেন, সারা বছর ভেতরে একটি আরামদায়ক তাপমাত্রায় থাকবে। শীতকালে তো গায়ে অতিরিক্ত কাপড় পরাই যেত, কিন্তু তারা যেসমস্ত পোশাক পরতেন, গ্রীষ্মকালে খুবই অসুবিধা হতো বলেই এই ব্যবস্থা নেওয়া। একারণেই শীতল ভবন বা তাহখানা নামেই এটিকে নামকরণ করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ৩০০ বছর পর স্থপতি লুই কান বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনেও প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন।

শাহ নেয়ামতউল্লাহ ওয়ালীর কবর

তাহখানার জন্য এই স্থানকে বেছে নেওয়ার পেছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল। এর পাশেই ছিল শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর আস্তানা, যাকে শাহ সুজা ধর্মগুরু বা পীর হিসেবে সম্মান করতেন। তাই এখানে এই আরামদায়ক ভবন, একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং তার ধর্মগুরুর জন্য একটি বাঁধানো কবর আগাম বানিয়ে দিয়েছিলেন শাহ সুজা। এই সবগুলি মিলিয়েই এটি এখন তাহখানা কমপ্লেক্স নামে পরিচিত।

তাহখানা ভবনটি একটি দ্বিতল ভবন হলেও কোনো কোনো দিক থেকে দেখে একতলা বলেই মনে হয়। এটি ইটে নির্মিত, তবে দরজার উপরে এবং বেশ কিছু মেঝেতে কালো পাথরের স্ল্যাব ব্যবহার করা হয়েছিল। এর এক পাশে রয়েছে একটি পুকুর। ভবনের ভেতর থেকেই পুকুরে নেমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি আছে। বাইরে থেকে এ অংশটি দেখার সুযোগ নেই বলে বাড়ির নারীরা এদিক থেকেই নেমে পুকুরে গোসল সারতে পারতেন। এই সিঁড়ির একপাশে রয়েছে একটি ছোট গোসলঘর। একধরনের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে উষ্ণ প্রবাহমান পানির ব্যবস্থা ছিল, যাতে শীতকালে স্বাচ্ছন্দ্যে গোসল করা যেত। এই ব্যয়বহুল বিশেষ ব্যবস্থাগুলি কেবল রাজকীয় পরিবারের নারীদের জন্যই করা হতো বলেই ধারণা করা হয় শাহ সুজা তার স্ত্রী ও কন্যাদের বসবাসের জন্য এই ব্যবস্থাগুলো করেছিলেন। সে কারণেই কিছু কিছু মানুষের ধারণা, মীর জুমলার কাছ থেকে পলায়নের সময় এই ভবনে শাহ সুজা সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখনই নির্মাণ করেছিলেন।

১৮৯৭ সালের ভুমিকম্পে তাহখানার বেশ ক্ষতি হলেও মসজিদ বা মাজারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। সাম্প্রতিককালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরো কমপ্লেক্সের সবগুলি ভবনেরই সংস্কার করেছে। মসজিদে প্রবেশের গেটটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে দেয়ালগুলোতে নতুনভাবে প্লাস্টার করার সময় সামান্য কিছু খোপ খোপ ডিজাইন করেছে, কিন্তু সুক্ষ ডিটেইলগুলি হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। অধিদপ্তর যখন মোঘল বা সুলতানী আমলের স্থাপনাগুলি সংস্কার করে, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সবগুলি স্থাপনাকেই একটি অদ্ভুত মেটে গোলাপি রঙে রং করা হয়। এই স্থাপনাগুলোও সেই রং থেকে রেহাই পায়নি।

তাহখানা ও এই মসজিদের মাধ্যমেই বিলাসবহুল বাসভবন এবং মসজিদ নির্মাণে মোঘল স্থাপত্য বাংলায় প্রবেশ করে। যে কারণে স্থাপত্য পরিমণ্ডলে এই কমপ্লেক্সের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে।

তাহখানার ছাদ থেকে দেখা মসজিদ

আমি এই স্থাপনায় গেছি একবারই, বেশ কয়েক বছর আগে। সেবার ক্যামেরার ফ্ল্যাশের সমস্যা হওয়ার কারণে তাহখানার ভেতরের ছবি তুলতে পারিনি। এরপর কয়েকবার পরিকল্পনা করেও শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মজার ব্যাপার হলো, আমরা যাওয়ার পর স্থানীয় এক লোক নিজ থেকেই আমাদের গাইড বনে গেলেন। সিঁড়ির পাশের গোসলখানাটিতে গিয়ে তিনি বলে ফেললেন, এটি ছিল এই প্রাসাদের জল্লাদঘর! কয়েদিদের এখানে এনে জবাই করা হতো। তাহলে রক্ত যেত কোথায় জিজ্ঞেস করাতে নির্বিকার উত্তর দিয়ে দিলেন, “কেন, পুকুরে?” যখন আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাংলার মুসলিম বাদশাহর রানী কি রক্তে ভরা পুকুরে নেমে গোসল করতেন? কী এক কাজ আছে বলে বেরিয়ে গেলেন গাইড, আর দেখা পাইনি তার!

চট্টগ্রামে শাহ সুজার কিংবদন্তি
গোটা বাংলায় শাহ সুজার নানা কীর্তি ছড়িয়ে আছে। চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি এলাকার নামের সঙ্গে শাহ সুজার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে কিছু কিছু গবেষক মনে করে থাকেন। এর একটি বর্তমান চট্টগ্রাম ও দুটি কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। এগুলি কী সত্যতা নির্ভর নাকি অনুমান নির্ভর, তা বলা কঠিন।

শাহ সুজা যখন আরাকানে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, নদীপথে বজ্রা ও বিভিন্ন আকারের নৌকায় তিনি পুরো বাহিনী নিয়ে রওনা করে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌঁছে যান। কিন্তু প্রথমত, বেশ কিছু নৌকা ছিল পুরাতন, আর দ্বিতীয়ত, এই নৌকাগুলি নদীপথের জন্য উপযুক্ত হলেও সাগরে চলার জন্য মোটেও উপযুক্ত ছিল না। তাই সাঙ্গু নদীর মোহনা পার হতেই বেশ কিছু নৌকা সাগরের ঢেউয়ে আছড়ে ভেঙে যায়। উপায় না দেখে শাহ সুজা সবাইকে নিয়ে পাড়ে উঠতে বাধ্য হন। এসময়ে চন্দনাইশে ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে দুটি জমিদারি। একটি ছিল খান পরিবার আর আরেকটি ছিল হাজারী পরিবার। মোঘল শাহজাদা বিপদে পড়েছেন শুনে হাজারী জমিদার তাকে নিমন্ত্রণ করে সাঙ্গু নদী ধরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আরাকান যাবার পরিকল্পনা শুনে হাজারী পরামর্শ দেন সাগর পথে না গিয়ে বরং স্থলপথ দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার। নোয়াপাড়ার জমিদার নৌকাযোগে তার বহরকে নাফ নদী পার হতে সাহায্য করতে পারবেন। এতে আনন্দিত হয়ে শাহীবজ্রাসহ সব নৌকা শাহ সুজা হাজারীকে দিয়ে দেন, আর বিনিময়ে হাজারী ১,০০০ দোলা (পাল্কি), ৬টি ঘোড়া এবং সঙ্গে আনা স্বর্ণ এবং হিরে-জহরত বহন করার জন্য ৬টি উট শাহ সুজাকে দিয়ে দেন।

ছাদ থেকে দেখা তাহখানা কমপ্লেক্সের অংশ

এদিকে খান পরিবার শাহ সুজার চাইতেও বেশি অনুগত ছিল আওরঙ্গজেবের প্রতি। যতক্ষণে খান জমিদার শাহ সুজার আগমনের খবর পায়, ততক্ষণে শাহ সুজা দক্ষিণে রওনা হয়ে গেছেন। হাজারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে খান জমিদার এলাকায় ব্যঙ্গ রটনা আরম্ভ করে, যে পলাতক শাহজাদার জন্য হাজারী হাজার দোলা বানিয়েছে। এই কুৎসা বা ব্যঙ্গ থেকেই এলাকাটির নাম হয়ে গেছে দোহাজারী।

রওনা হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই আরম্ভ হয়ে যায় রমজান মাস। রোজা রেখে নারী ও শিশুসহ এত মানুষের যাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। শাহ সুজা সিদ্ধান্ত নেন যাত্রাবিরতির। একটি জায়গা বেছে নেন, যেখান থেকে পশ্চিমে দূরে সাগরের উপর দিয়ে সুর্যাস্ত দেখা যায়, আবার পূর্বে পাহাড়ে সামান্য উঠলে দূরের অন্য উঁচু পাহাড়ের ফাঁক দিয়েও সূর্যোদয় দেখা যায়। কাছাকাছি একটি নদীও আছে, তাই পানির সমস্যা নেই। এক হাজার দোলাসহ একমাস আশ্রয় নেওবার এই স্থানটি কালের পরিক্রমায় দোলাহাজারী এবং শেষে দুলাহাজরা নাম নিয়েছে। এখানেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক।

রোজার শেষদিকে হাজারীর বিশেষ দূত এসে খবর দেয় মীর জুমলার বাহিনী চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই ২৭ রমজান পার হওয়ার পর শাহ সুজা ঈদের অপেক্ষা না করেই আবার দক্ষিণে রওনা হয়ে যান। পথিমধ্যে ঈদের চাঁদ দেখা দিলে একরাতের মধ্যে একটি প্রশস্ত ফাঁকা এলাকায় পাথর ঘিরে এলাকাটি পরিষ্কার করে সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই এলাকার নাম হয়ে যায় ঈদ্গাঁও। অল্প কিছুদিন আগে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার এই ঈদগাঁওকে একটি থানায় উন্নীত করেছে।

তাহখানার সামনে পরিবারসহ লেখক

সরকারি ওয়েবসাইটেও এলাকার নামকরণে এই গল্পগুলির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। তবে আসলেই এগুলো ইতিহাস কি না, নাকি শুধু গল্পই তা নিশ্চিতভাবে বলা কষ্টকর।

তাহখানা কমপ্লেক্সে কীভাবে যাবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে তাহখানা কমপ্লেক্সে অটোরিকশায় যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। আর বর্ডারের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস পেলে তো কথাই নেই! সোনা মসজিদ পার হয়ে প্রায় ২৫০ গজ এগোলে হাতের বাঁয়ে পড়বে পর্যটন মোটেল। তার ঠিক আগেই পড়বে তাহখানায় যাবার রাস্তা। এই পথে মহাসড়ক থেকে প্রায় ২০০ গজ এগুলেই হাতের ডানে পড়বে তাহখানা কমপ্লেক্স।

ভ্রমণ যখন বা যেখানেই করি না কেন, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সবাই যে করে, তা নয়। এই স্থাপনাগুলি দেখতে গেলে অবহেলার বিষয়টি আরও বেশি চোখে পড়ে। আপনার পরবর্তি প্রজন্মের ভ্রমণ পীপাসুদের জন্য হলেও আপনার ব্যবহৃত জিনিস, যেমন পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি নির্ধারিত জায়গায় ফেলুন বা সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।

এসএন

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা

ছবি: সংগৃহীত

নিশ্বাস বন্ধ করে দেওয়া এক ফাইনাল, যেখানে নাটক, উত্তেজনা, এবং আবেগ সবই একসঙ্গে ঠাঁই পেয়েছে। কোপা দেল রে’র এবারের ফাইনালে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ উপহার দিয়েছে পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ। আর শেষ হাসি হেসেছে কাতালানরা—১১৬তম মিনিটে জুলস কুন্দের দুর্দান্ত গোলে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালকে শিরোপা জিতে নেয় বার্সেলোনা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) ভোরে সেভিয়ার এস্তাদিও দে লা কার্তুইয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই ঐতিহাসিক ম্যাচ। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। ম্যাচের ১২ মিনিটে দুর্দান্ত এক দূরপাল্লার শটে বার্সাকে এগিয়ে দেন পেদ্রি। প্রথমার্ধে রিয়াল খুব একটা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি খেলোয়াড়দের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় আনচেলত্তির দল।

৭০ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান। এরপর কর্নার থেকে চুয়ামেনির হেডে রিয়াল নেয় লিড। কিন্তু সেই আনন্দ টিকল না বেশি সময়। ৮৪ মিনিটে ইয়ামালের পাস থেকে ফেরান তোরেস গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। গোলরক্ষক কর্তোয়া ও রুডিগারের ভুলের সুযোগ কাজে লাগান তরেস।

৯০ মিনিট শেষে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে বার্সা আবার ফিরে পায় নিয়ন্ত্রণ। একাধিক সুযোগ তৈরি করে তারা। শেষ পর্যন্ত ১১৬ মিনিটে লুকা মদ্রিচের পাস কেটে নিয়ে দূর থেকে নিচু শটে গোল করে নায়ক হয়ে ওঠেন ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে। বার্সার জার্সিতে এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল।

রিয়াল যদিও শেষ দিকে আবার পেনাল্টির দাবি তোলে, কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়। উত্তেজনায় ফেটে পড়ে রিয়ালের বেঞ্চ, যার ফল হিসেবে দুই বদলি খেলোয়াড় রুডিগার ও লুকাস ভাজকেজ দেখেন লাল কার্ড।

এই জয়ে চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার দ্বিতীয় শিরোপা এল ঘরে। এর আগে স্প্যানিশ সুপার কাপেও তারা হারিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদকে। কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এটি বার্সার ৩২তম শিরোপা—যা সর্বোচ্চ।

Header Ad
Header Ad

উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুণ ও এক তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উত্তরা পূর্ব থানার ৮ নম্বর সেক্টরের শেষ প্রান্তের রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তরুণ-তরুণী রেললাইন দিয়ে হাঁটছিলেন এবং সেলফি তুলছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী ও টঙ্গীগামী দুটি ট্রেন একযোগে রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় টঙ্গীগামী ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তরুণী মারা যান।

গুরুতর আহত অবস্থায় তরুণটিকে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাত ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, উত্তরা থেকে আহত অবস্থায় এক তরুণকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি