দারিদ্র্যপীড়িত রাজিবপুরে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে রাজিবপুর সরকারি কলেজ

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা-দুই বছর আগেও ছিল দরিদ্র তালিকায় শীর্ষে। এ উপজেলার খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়তে যায়। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ থেকে যায় রাজিবপুরেই এবং ভর্তি হয় স্থানীয় কলেজগুলোতে। এদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। এসব শিক্ষার্থীর স্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম পছন্দ রাজিবপুর সরকারি কলেজ। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন।
এক সময় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল কলেজটি। সরকারি হওয়ার পরও দুর্নীতিবাজদের থাবা থেকে রেহাই পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষার ফি প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল - ছেলেদের জন্য ১৭৬০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১৪০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ৭ এপ্রিল তা কমিয়ে আনা হয় ছেলেদের জন্য ১৩০০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১০০০ টাকায়। অথচ সরকারি নির্ধারিত ফি মাত্র ৩০০ টাকা।
ইসরাত জাহান আঁখি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পরীক্ষার ফি বেশি হওয়ায় আমরা আন্দোলন করি, পরে স্যাররা ফি কমিয়ে দেন। তবে শুরুতে কয়েকজন আগের নির্ধারিত ফি-ই দিয়েছে।”
সুজন মিয়া ও হারুন-অর-রশিদ নামের দুই শিক্ষার্থী বলেন, “সরকারি কলেজে এত ফি ধরায় আমরা হতাশ। যদি সরকারি কলেজেই এমন ফি হয়, তাহলে প্রাইভেট কলেজে পড়াই ভালো। আমরা চাই সরকারি কলেজ সরকারি নিয়মে চলুক এবং নির্ধারিত ফি-ই আদায় করা হোক।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর বার্ষিক ও দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এর বাইরে কোনো পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে 'মূল্যায়ন পরীক্ষা'র নামে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “ভর্তি হওয়ার পরপরই আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেকেই তখন বই-ই কিনে উঠতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছি, শুধু টাকা আদায়ের জন্যই এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।”
ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছি, প্রায় সবকটিতে ১ হাজার টাকার বেশি ফি দিতে হয়েছে। সরকারি কলেজে এত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা চাই, সরকারি নির্ধারিত ফি অনুযায়ী কলেজ পরিচালিত হোক।”

অভিযোগ রয়েছে, রাজিবপুর সরকারি কলেজ ফান্ডের প্রায় ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনো কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন এবং কয়েকজন অসাধু শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “দীর্ঘদিন হলো ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজই শুরু হয়নি। অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন।”
সরকারি পরীক্ষার ফি যেখানে ৩০০ টাকা, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এ বিষয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি যে হিসাব উপস্থাপন করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে-পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা, পুনঃভর্তি ৩০ টাকা, বেতন (৩০×১২) ৩৬০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় খরচ ৪৬০ টাকা এবং সেশন ফি ২০০ টাকা, মোট ১৩০০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া রশিদে কোনো খাতের উল্লেখ নেই।
সাক্ষাৎকারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, “৪ লাখ টাকার বিষয়টি প্রশাসনিক ব্যয়। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কেনাকাটার জন্য ব্যয় করা হয়েছে। তবে ব্যয়ের কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র সম্পর্কে বলেন, ‘কাজের চাপ বেশি, পরীক্ষা চলছে-এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব না।’”
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা। এখানে ১২ মাসের বেতন, অত্যাবশ্যকীয় ফি যোগ হয়েছে। কম্পিউটার অপারেটর মনোয়ার, বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষক-তাদেরও সম্মানী দিতে হয়।”
নিয়মবহির্ভূত পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, “সব শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।”
