রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন ও আমলাতন্ত্র

রংপুরের ডিসি মহোদয় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন তাহলে তার মান সম্মান কোনোভাবে কমে যেত না বরং বেড়ে যেত। একইভাবে, উক্ত শিক্ষক যদি ডিসি মহোদয়কে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন তাতে তারও মান সম্মানের একটুও হানি হতো না বরং বেড়ে যেত। দুজনই কিন্তু দুজনের সুপিরিয়রিটি দেখাতে চেয়েছেন। তবে, ডিসি একটু বেশি দেখাতে চেয়েছেন এবং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের স্যারই বলতে হয়, কারণ তিনি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা— যারা নিজেদের সবার চেয়ে আলাদা ভাবেন।

কেন ভাবেন তার সে রকম কোনো উত্তর নেই। তবে, শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে বিরল এক ধরনের প্রতিবাদ করে বিষয়টিকে অনেকের মাঝে পৌঁছে দিতে পেরেছেন— সেটির জন্য তাকে ধন্যবাদ। আমাদের দেশের শিক্ষকরা কিন্তু সেই জায়গাতে নেই যে, সমাজের সবাই তাদের সম্মান জানাবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ সেই জায়গাটি দখল করেছেন কিন্তু সাধারণ অর্থে সবার ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়নি, আর তাই সমাজ সব শিক্ষককে মোটামুটি একই মানদণ্ডে মাপতে চায়। এটিও একেবারেই ঠিক নয়।

সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভেতরেও কেউ কেউ আছেন শিক্ষকদের ‘স্যার’ বলেন, তাতে তাদের সম্মানের কোনো হানি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমরা সোচ্চার ছিলাম যে, এত গরিব দেশে সোনবাহিনীর পেছনে এত খরচ, বসে বসে তাদের দেশ পালছে কেন। সেই সেনাবাহিনী কিন্তু এখন বড় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ বাহিনীতে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে লাখ লাখ ডলার দেশে নিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, দেশেও রয়েছে তাদের বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা। কাজেই সেনাবাহিনী নিয়ে এখন তেমন কথা নেই। কিন্তু আমাদের এ সব প্রশাসকদের নিয়ে কী হবে? সমাজের কী হবে? এখনো সবাই, উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পরেও একজন প্রশাসক হওয়ার জন্য অর্জিত সববিদ্যা জলাঞ্জলি দিয়ে কেরানী হওয়ার জন্য পাগলপ্রায়।

দেশের সত্যিকার উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশে প্রয়োজন প্রচুর প্রকৃত গবেষক (শুধু ডক্টরেট নামধারী নয়), প্রকৃত বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, আবিষ্কারক, উদ্ভাবক, দরকার ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা যারা অন্যের কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করতে পারেন, ব্যবসায়ী যারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারেন, প্রয়োজন দক্ষ জনবল তৈরি যারা দেশে ও বিদেশে দক্ষতার ছাপ রেখে দেশের উন্নয়নে প্রকৃতঅর্থে অবদান রাখতে পারেন।

আমাদের দরকার প্রচুর ‘ভালো ডাক্তার’। আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার বানাচ্ছি কিন্তু লাখ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন ভারত, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ডে। ডাক্তারদের তো যন্ত্র বানালে হবে না, তাদের মানবিকতাও শিক্ষা দিতে হবে। মানুষের সঙ্গে কীভাবে, রোগীর সঙ্গে অভয়বানী দিয়ে কথা বলতে হয়— তা আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তারই জানেন না। ফলে অসচ্ছল রোগীও জামিজমা বিক্রি করে ভারতে যায় চিকিৎসার জন্য। সেখানকার ডাক্তাররা জানেন রোগীদের সঙ্গে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। চিকিৎসা মানেই শুধু গন্ডায় গন্ডায় টেস্ট করানো নয়, সেটি তারা বুঝেন। কিন্তু এ সব বিশেষজ্ঞ তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই বরং পড়াশুনা করে এসে সবাই প্রশাসক হওয়ার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তাই, ডাক্তার হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন এসিল্যান্ড, কৃষিবিদ হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ।

জাতীয় জীবনে এটির প্রভাব মারাত্মক নেগেটিভ কিন্তু কে এগুলো নিয়ে চিন্তা করবে? প্রশাসক হয়ে সবাই জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ শোনার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তারা যেন সেই ব্রিটিশ রাজ্যে বাস করছেন। চারদিকে শুধু প্রশাসক। আর আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি দেশের বাইরে। প্রকৌশলী নিয়ে আসছি বিদেশ থেকে, আমাদের রাস্তা, ব্রিজ তৈরি করে দিচ্ছেন বিদেশি প্রকৌশলীরা। আর আমাদের প্রকৌশলীরা হচ্ছেন প্রশাসক। কেন? সবাই তাদের ‘স্যার’ বলবেন, শক্ত করেই বলবেন। আত্মীয়-স্বজন বলতে পারবে আমার ভাগ্নে অমুক জেলার ডিসি, ওমুক উপজেলার ইউএনও। সমাজও তাতে বেজায় খুশী। আমার চাচা সচিব।

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকা দরকার, কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার আর এগুলোর জন্য প্রয়োজন উদ্যেক্তা, ব্যবসায়ী। উদ্যোগী মানুষ যারা প্রকৃতঅর্থে দেশের উপকার করছেন। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি ব্যবসা করবেন, উদ্যোক্তা হবেন, এনজিও কর্মী হবেন আপনাকে যেতে হবে ওইসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে, যারা আপনার ফাইল আটকে দিয়ে মজা লুটছেন, ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। দেশ কেমনে আগাবে? দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। পৃথিবীর ধনী গরিব সব দেশেই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা কাজ করে।

আমাদের দেশের উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রভূত অবদান রয়েছে। অনেক সংস্থা বিদেশ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সাহায্য নিয়ে আসে কিন্তু ‘এনজিওব্যুরো’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে সেখানে গিয়ে আপনাকে ধরনা দিতে হবে দ্বারে দ্বারে— আপনার সেই অর্থ ছাড়ের জন্য। এখানেও সেই ‘আমলাতন্ত্র’ যার কাছে সবাই জিম্মি। আপনাকে অনেক কৌশলে উৎকোচ দিতে হবে (কাগজের মধ্যে, ফাইলের মধ্যে, যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে)। এগুলো দেখার কেউ নেই।

ব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ যে প্রতিষ্ঠান দেশে সৃষ্টি করেছেন তাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছেন। ফজলে হাসান ছাড়াও অনেক ছোট ছোট এনজিও গড়ে তুলেছেন এক একজন সফল ব্যক্তি, যারা দেশকে প্রকৃতঅর্থেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। কিন্তু তাদের পদে পদে বাঁধা দেওয়ার জন্য রয়েছেন এ সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকও কিন্তু তার একটি বিদ্যালয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন রংপুরের ডিসি মহোদয়ের কাছে।

আমাদের প্রশাসনে যে ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য কর্মকর্তারা ‘স্যার’ শুনতে চান তার পেছনে রয়েছে ঔপনিবেসিক মানসিকতা।

ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস গঠন করে সেখানে ভারতীয়দের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন পাশ করা হয়। কিন্তু ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের অংশ নেওয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছিল আইসিএসে থাকা ব্রিটিশ অফিসারদের কারসাজিতে। এ সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয়দের আইসিএসে নিয়োগদান প্রশ্নে আইনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো একটি বিশুদ্ধ সার্ভিসে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তর বিষয়ে আপত্তি তোলেন। তাদের বক্তব্য অনেকটাই এমন ছিল যে, ভারতীয়রা নোংরা ও দুর্নীতিগ্রস্ত, ফলে পুরো ব্যবস্থাটা হুমকির মুখে পড়বে। তখন ভারতীয়দের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন ভারত সচিব বলেছিলেন, আমরা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের আদলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে এমন সব ভারতীয়কে নিয়োগ দেব, যারা দেখতে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় হবে ব্রিটিশ। ১৯৫৩ সালেই আইসিএসে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভারতীয় আইসিএস অফিসার হতে পারেনি। কারণ আইসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো লন্ডনে। সে সময় বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে পয়সা খরচ করে লন্ডনে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ১৯৬৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইসিএস অফিসার হন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এভাবেই স্থানীয়রা ব্রিটিশ কাঠামোর প্রশাসন ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে, যারা এদেশের মানুষ কিন্তু ব্রিটিশ রাজকর্মচারী হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে। ধীরে ধীরে সেই আমলাতন্ত্র সমগ্র ভারতবর্ষের শাসনকাঠামোতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে।

শরীরের রং ভারতীয় কিন্তু চিন্তা চেতনায় ইংরেজ শাসক! পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ভারত থেকে বেশ কিছু আইসিএস অফিসার পাকিস্তানে চলে আসেন এবং পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় জেঁকে বসেন। স্বাধীন দেশে কাজ করতে তারা উপযুক্ত নন। কিন্তু শুরুতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যোগ্য রাজনীতিবিদ না থাকায় তারাই হয়ে পড়েন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। কিছু দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বাঙালিরা ছিল অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। শুরু থেকেই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ চলে গিয়েছিল ভারত থেকে আসা আমলাতন্ত্রের হাতে। পাকিস্তানে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্মে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর পাকিস্তান গণপরিষদ যখন দেশটির সংবিধান রচনায় ব্যস্ত তখনই সামরিক-বেসামরিক আমলাদের প্ররোচনায় দেশটির গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ সেই গণপরিষদ ভেঙে দেন। কারণ আমলাদের শঙ্কা ছিল পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হলে দেশের শাসনভার রাজনীতিবিদ তথা জনপ্রতিনিধিদের হাতে চলে যাবে। আর তখন তাদের রাজনীতিবিদদের অধীনে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য গোলাম মোহাম্মদও একজন আমলা ছিলেন।

আমাদের নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন আসলে লিঙ্গসমতার একটি ভালো উপায় বলে কেউ কেউ বলছেন, আবার অন্য একদল বলছেন এটি অত্যন্ত আপত্তিকর। নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন? তাদের স্যার বললে তারা খুব খুশী হন। আমরা দুবার স্বাধীন হয়েছি কিন্তু মন মানসিকতায় আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিই রয়ে গেছি। ব্রিটিশদের কথা না হয় বাদই দিলাম, কারণ তারা তো সারাবিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

পাকিস্তানের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমরা কি দেখতে পাই? পাকিস্তান দুটি দলে বিভক্ত। সেনাবাহিনী আর তার বিরোধী। স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে সরাসরি কিংবা ছদ্মবেশি মার্শাল ল-ই চলছে। সেখানকার সেনাবাহিনী মনে করে তারাই দেশের সবকিছু। সিভিলিয়নরা কিছু বোঝে না, তাদের হাতে দেশ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই তারা সেখানে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ তৈরি হতে দেয়নি। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী নিয়েও কেউ কেউ বলতে চান যে, ইন্টারমিডিয়েট পাস, তাদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর তলে। এটিও ঠিক নয়, কারণ শুধু পাস দিয়ে সবকিছু যাচাই করা যায় না। বেশ সুচতুর এবং মোটামুটি অলরাউন্ডার হয় সেনা অফিসাররা। কিন্তু তাই বলে তারা সবকিছু বুঝেন আর সিভিলিয়নরা কিছুই বোঝে না— এই ধরনের মানসিকতা কিছু কিছু কর্মকর্তা পোষণ করেন। কারণ তাদের সুযোগ সুবিধা বেশি, থাকেন আরামে, অর্থের চিন্তা নেই, স্মার্টনেস তো এমনিতেই চলে আসে।

স্রষ্টা পৃথিবীকে সৃষ্টিই করেছেন যেখানে সব ধরনের পেশাজীবীদের দরকার আছে। এখানে কারুর গুরুত্ব কোনোভাবেই কম নয়। স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্যকে ধারণ করে সবাই সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে— আমরা যে যে পেশাতেই থাকি না কেন। এ দেশ তো আমাদের। বিশ্বের দরবারে যদি কোনো সম্মান আমরা অর্জন করতে পারি, তার ভাগিদার তো সবাই। সবাই আমাদের বাঙালি বলেই চিনবে। আইন করে কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলানো বা না বলানো যায় না। এটি ভেতর থেকে আসে। আমরা সবাই সবাইকে সম্মান করি। তাতে কারুরই কোনো ক্ষতি নেই। আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের তো আমরা এখনো ‘স্যার’ বলি। একটি নাটকে প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদীর সচিব চরিত্রে দেখেছিলাম তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি তার ছাত্রের মতো আচরণ করেননি কিন্তু শিক্ষকের মতোই আচরণ করে যাচ্ছেন। সচিব মহোদয় কোনো কথা বলছেন না। এক পর্যায়ে মুখ খুলে বললেন, ‘আপনার তো দেখছি এত বছরে কিছুই বদলায়নি, যা ছিলেন তাই আছেন।’ একটিবারও ‘স্যার’ বলছেন না। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের আচরণ চাই না। শিক্ষণীয় আচরণ দেখতে চাই।

মাছুম বিল্লাহ: সাবেক শিক্ষক, ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা