রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

মূল্যায়ন নিয়ে বিভ্রান্তিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী

মূল্যায়ন শিখন শেখানো কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও বিষয়। আমরা এত বছর যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে এসেছি সেটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। তাই নতুন কারিকুলামে এখানে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে বিপাকে প্রায় সবাই। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচচমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম-দুটোই থাকছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ‘শিখনকালীন’ এবং বাকি ৪০ শতাংশ হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে।

নবম-দশম শ্রেণিতে এটি ৫০ শতাংশ-৫০ শতাংশ আর উচ্চ মাধ্যমিকে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামস্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রমের ভিত্তিতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ের পুরোটাই শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। এখানেই বেঁধেছে বিপত্তি। একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, ঠিকমতো বই পৌঁছায়নি সব শিশুদের কাছে, ইতোমধ্যে দুটো বই তুলে নেওয়া হয়েছে, যেসব বই শিশুদের কাছে এসেছে সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভুল-ভ্রান্তি ধরা পড়ছে। সবকিছু নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে।

আমি দেখছি শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ তাদের বলা হয়েছে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং বাকি ৪০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে অর্থাৎ সামস্টিক মূল্যায়ন। এখন এই ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন কীভাবে হবে সেটি কারোর কাছেই স্পষ্ট নয়। অনেক শিক্ষক কথা বলছেন, ফোন দিচ্ছেন, মেইল দিচ্ছেন বিষয়টি আরও খোলাসা করার জন্য। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি আপনারা প্রশিক্ষণে এর উত্তর পাননি। উত্তরে সবাই যেটি বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে, ‘বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও প্রশিক্ষকরা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি সম্পর্কে তাদেরও স্বচ্ছ ধারণা নেই।’

আসলেও তাই। কোনো বিষয়ের বইয়ে কোনো ধরনের মডেল প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়নি। সম্ভবত শিক্ষার্থীদের অধিক মাত্রায় সৃজনশীল করার জন্যই এই প্রচেষ্টা। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আইইএলটিএস-এর মতো আন্তর্জাতিক পরীক্ষায়ও খুব সন্দরভাবে সিলেবাস, মডেল প্রশ্ন দেওয়া থাকে। পরীক্ষার চারটি অংশের কোনো অংশে কত সময়, কয়টি প্রশ্ন থাকবে, ওই ধরনের প্রশ্নের উদ্দেশ্য কী অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কী টেস্ট করা হচ্ছে সবকিছুই সুন্দরভাবে উল্লেখ করা থাকে। আর আমাদের কী হলো, আমরা হঠাৎ করে এত সৃজনশীল বানানোর চেষ্টা কেন করছি? এতে তো দেখছি ‘আম’ ও ‘আমের ছালা’ সবই যাচ্ছে। শিক্ষকরা বিভ্রান্তিতে, অভিভাবকরা বিভ্রান্তিতে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না বহু জায়গায়, আসলেও কিছু করতে চাচ্ছে না। এই অবস্থা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।

শিখনকালীন কোন লেসন বা চ্যাপ্টার কীভাবে নিতে হবে, প্রতি সপ্তাহে না মাসে নিতে হবে, যেহেতু নম্বর দেওয়ার পদ্ধতি নেই তাহলে সেগুলোর গড় কীভাবে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো ঘোলাটে। তারপর সে ফলগুলো মূল ফলকে, মূল মূল্যায়নে কীভাবে সংযুক্ত হবে এবং সার্বিক মূল্যায়নে সেটি কীভাবে মূল্যায়িত হবে সেসব বিষয় পুরোপুরি অনুপস্থিত। কাজেই শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, শিক্ষকরাও বিপাকে। প্রশিক্ষণে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি। কেউ কেউ করতে চেয়েছেন, প্রশিক্ষকরা এড়িয়ে গেছেন। বিষয়টি প্রশিক্ষকদের কাছেও স্পষ্ট নয়। যে অ্যাপসের মাধ্যমে এটি করার কথা, সেই অ্যাপসের খবর নেই। কবে হবে তারও কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শিক্ষকদের মধ্য থেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা ও প্রশ্ন আসার কথা ছিল সেভাবে কিন্তু আসেনি বা আসছে না। শুধুমাত্র আগ্রহী ও সিরিয়াস কিছু টিচার বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন। আমাদের পূর্ববর্তী মূল্যায়ন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের দায়িত্বই শতভাগ যা প্রাইভেট কোচিং, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ-নির্ভরতা, শিক্ষকদের নোট প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রভাবিত করত। দীর্ঘদিন ধরে এটা ছিল আমাদের শতভাগ মূল্যায়নের ধরন। এখন যে প্রক্রিয়াটি আসছে, সেখানে শিক্ষার্থীর স্বমূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে। সে হাতে কলমে একটা কাজ করে এসে তারপর তাকে একটা রুবরিক্স পূরণ করতে হবে। ছকটা পূরণ করে ওই জায়গাগুলোতে তার যে পর্যবেক্ষণগুলো সে দেখেছে বা শুনেছে বা হাতে কলমে করেছে তার এভিডেন্সগুলোর রেফারেন্স লিখতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সহপাঠী মূল্যায়ন গ্রুপ, একটা গ্রুপ আরেকটা গ্রুপকে মূল্যায়ন করবে। আবার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে অভিভাবক বা অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে তার যে ইন্টারঅ্যাকশন হচ্ছে তারাও এখানে বিভিন্ন উপায়ে অংশগ্রহণ করবে। এগুলোর এভিডেন্সগুলো থাকছে, এসবের ভিত্তিতে শিক্ষককে একটি কালেক্টিভ রেজাল্ট তৈরি করতে হবে। আগে যে মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিল সেখানে ক্রসচেকের কোনো উপায় ছিল না, বর্তমানে তা থাকার কথা। স্কুল বেজড অ্যাসেসমেন্ট ছিল লিখিত পরীক্ষা নির্ভর ৮০ ভাগ, আর ২০ ভাগ ছিল ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন। প্রায়োগিক দিকের যে প্লানিং ছিল সেখানে বড় গ্যাপ ছিল। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকই একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। যার ফলে শিক্ষক সেটিকে সঠিকভাবে করতে পারেননি অনেক ক্ষেত্রেই। বর্তমানের মূল্যায়নটা আলাদা। কারণ অভিজ্ঞতা চক্রের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিখবে যেখানে শিক্ষার্থীর স্বমূল্যায়নের জায়গা আছে, তাকে নানারকম কাজ করতে হবে। বর্তমান মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এসব বিষয়ের উল্লেখ আছে কিন্তু শিক্ষকরা এগুলোর সঙ্গে এখনো পরিচিত নন, আত্মবিশ্বাসী হওয়া তো দূরের কথা।

সৃজনশীল প্রশ্ন মানুষের শিখনকে লিখিত উপায়ে প্রকাশের একটা বিকল্প মাধ্যম যেটা মানুষের ক্রিটিক্যাল থিংকিংকে উন্নত করার জন্য করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষতো তার শিখনকে শুধু লিখে প্রকাশ করে না। এখানে একটি গ্যাপ রয়েছে। লিখে প্রকাশ করা বিষয়টিকে ঠিক রেখে নানারকম বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যায়নে লেখাটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখা হয়। কারণ লেখার অর্থ হচ্ছে প্রার্থীর অন্তর্নিহিত ধারণা, চিন্তাধারা, মতামত, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কল্পনা, পরিকল্পনা, স্বপ্ন, উদ্দেশ্য বিস্তারিতভাবে তার লেখায় ফুটে উঠে যদিও লেখার দ্বারা তার উপস্থাপন দক্ষতা কিংবা সহমর্মিতা বা গণতান্ত্রিক ধারণার বাস্তব প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। লেখার মাধ্যমে নান্দদিক দিকগুলোও ফুটে উঠে। তাই যুগ যুগ ধরে লেখাটাই একজন প্রার্থীর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু নতুন কারিকুলামে লেখা বিষয়টির উপর উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষেই সবকিছু পড়ানো হবে কথাটি আদর্শিক। বাস্তবের সঙ্গে পুরোটা কিন্তু মিলে না অন্তত আমাদের দেশের কনটেস্টে। প্রথমত, শ্রেণিকক্ষের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে একটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ অনুশীলন দরকার সেটি হয় না কিছু বাস্তব কারণে। একজন শিক্ষার্থীর যে আলাদা সময় প্রয়োজন সেটি দেওয়ারও সুযোগ থাকে না। কাজেই শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে যারা ভালো ফলাফল করতে চাইতো তারা প্রাইভেট পড়ে, কোচিং করে সেগুলো সেরে নেওয়ার চেষ্টা করত। যারা দুর্বল তারা দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য প্রাইভেট পড়া ও কোচিং করা চালিয়ে যেত। তবে বিষয় দুটো কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক আকার ধারণ করায় সচেতন অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও পলিসি মেকাররা প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে আসছেন এবং বন্ধের জন্য কিছুটা এই ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষাকে আনন্দময় করার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে হোমওয়ার্কের একেবারেই গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়টিও চলে এসেছে। কিন্তু হোমওয়ার্ক একেবারে বাদ দেওয়া ঠিক হবে না কারণ এই বয়সের শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখতে হবে কিন্তু সেটি যেন তাদের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়। বাসায় একেবারে কিছু করার না থাকলে তারা বাজে কাজে সময় নষ্ট করবে। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা বলে যে কথাটি প্রচলিত আছে সেটিই হয়তো এখানে হবে। শ্রেণিকক্ষের অল্প সময়ের মধ্যে সব বিষয়ের সঠিক অনুশীলন সম্ভব হয় না। তা ছাড়া কিছু শিক্ষার্থী সবার সামনে থেকে বিষয় আয়ত্ত করতে পারে না, তাদের আলাদা এবং নিজস্ব সময় প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীরা পাস করছে, ভালো গ্রেডিং পেয়ে আসছিল কিন্তু তাদের ক্রিটিক্যাল থিংকিং উন্নত হচ্ছিল না, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেটি ভালো পদক্ষেপ। আগে কোনোরকম আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছাড়া, কনটেক্সটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না বুঝেই একজন শিক্ষার্থী কেবল মুখস্থ করে ভালো নম্বর পেয়ে যেত। এখন কিন্তু তাকে বুঝে কনটেক্সটের সঙ্গে রিলেশনশিপ তৈরি করে শুধু মাত্র জানলেই চলবে না, তাকে সেটা প্রয়োগ করার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। এটিও আদর্শিক কথা বলে মনে হয়। ক’জন শিক্ষকের এ বিষয়টি মূল্যায়ন করার দক্ষতা রয়েছে সেটি একটি বিষয়, তা ছাড়া একজন শিক্ষককে প্রতিদিন কয়টা করে ক্লাস নিতে হয়, কতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, কতটা ধৈর্য তার থাকে যে এসব বিষয় লক্ষ্য করে করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, মেধা আছে কিন্তু প্রকাশ করার পরিবেশ, পরিস্থিতি না থাকায় এগুলো সুপ্তই থেকে যায়, প্রকাশিত হয় না, হলেও অনেক বিলম্বে। ভালো গ্রেডিং নিয়ে পাস করেও লেখায় দুর্বল ছিল। বর্তমান মূল্যায়নে লেখার উপর গুরুত্ব আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ তার কার্যাবলির উপরই বেশি মূল্যায়ন হবে। যেকোনো মূল্যায়নে লেখাটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখা হয়। যুগ যুগ ধরে লেখাটাই একজন প্রার্থীর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু নতুন কারিকুলাম বিষয়টির উপর গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি বিবেচনার দাবি রাখে। তবে একজন শিক্ষক যদি দক্ষ হন তাহলে শিক্ষার্থীদের লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করায় তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন। যেকোনো কারিকুলামেই শিক্ষকের দয়িত্ববোধ, সৃজনশীলতা এবং জানার আগ্রহ শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে ও তা বাস্তবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

এসজি

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা