রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

মান উন্নয়নে আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে বিশাল আকার করে রাখা হয়েছে বহু বছর ধরে এবং বিষয়টি ডমিনেট করছে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা; যারা মূলত কলেজ শিক্ষক। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের ক্যাডার থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে যদি ক্যাডার সার্ভিসের শিক্ষকরা পড়াতেন তাহলে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে বিরাট এক পরিবর্তন আশা করা যেত এবং শিক্ষা প্রশাসনে মাধ্যমিকের নিজস্ব ক্যাডার মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে পারত। সেটি কেন হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। ক্যাডেট কলেজে একজন লেকচারার, একজন সহকারী অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক কিন্তু সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে ক্লাস পরিচালনা করেন। ফলে, শিক্ষার্থীদের জানার জগৎ অনেকটাই প্রসারিত। সরকারি বিদ্যালয়ে সেটি কেন করা হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝতে পারলাম যে, কলেজ শিক্ষকরা চান না মাধ্যমিকের শিক্ষকরা মাধ্যমিকের প্রতিনিধিত্ব করুক। কলেজ শিক্ষকরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন। ফলে, মাধ্যমিক শিক্ষা দুর্বলই থেকে যাচ্ছে।

দুয়েকবার কয়েকজন সচিব চেয়েছিলেন শিক্ষকদের দিয়ে নয়, আমলাদের দিয়ে মাউশি চালাবেন। তাদের ধারণা শিক্ষকরা শিক্ষা প্রশাসন চালাতে পারেন না, আমলারা প্রশাসন চালাতে দক্ষ। বেশ শক্ত করেই কয়েকবার লিখেছিলাম বিষয়টির বিরুদ্ধে। খোদ সেনাবাহিনীর শিক্ষা প্রশাসনের পরিচালক কিন্তু শিক্ষা কোরের, ইনফ্যান্ট্রির নয়। তাহলে সিভিলে কেন? মাধ্যমিক শিক্ষকদের দাবি হচ্ছে মাউশি ভেঙে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ নামে দুটি আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হোক। মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্তর। প্রাথমিকের পরই মাধ্যমিকের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। কেননা মাধ্যমিক শিক্ষার পরবর্তী এবং উচ্চতর ধারায় প্রবেশের পূর্ববর্তী স্তর। আমাদের ছোট্ট দেশে জনসংখ্যা অনেক। ফলে সব স্তরেই শিক্ষার্থী প্রচুর। আর সেই চাপ সামাল দিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন অনেক। এই হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ন্ত্রিত হয় একটিমাত্র অধিদপ্তর অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর দিয়ে। ফলে, কাজে গতিশীলতা নেই, শিক্ষকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।

আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সৃষ্টির যুক্তিসমূহ- ১৮০০ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ’কারিগরি অধিদপ্তর’ ও ৯৬৫৬টি মাদ্রাসার জন্য আলাদা ‘মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ গঠিত হলেও জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবনা অনুযায়ী আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা আটকে আছে বহুবছর। ২০ হাজারেরও অধিক মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা অধিদপ্তর তো আসলেই প্রয়োজন। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে ’স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ ঘোষিত হয়েছিল এবং মাধ্যমিক শিক্ষকরা আশা করেছিলেন যে, শিক্ষার উন্নয়নে এটি এক নব যুগের সূচনা করবে। (জাতীয় শিক্ষা ২০১০, পৃষ্ঠা-৬৪) এখানে বলা হয়েছিল যে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙে দুটি পৃথক অধিদপ্তর যথাক্রমে ’মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং ’উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ গঠন করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত (২০২৩) বিষয়টিতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

আদালতের রায় অনুযায়ী প্রায় তিন হাজার শিক্ষকের ২০১৫ সালের জাতীয় পে-স্কেল এর পূর্বের বকেয়া টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা। সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে সরকারি মাধ্যমিকের জন্য একটি যৌক্তিক পদ সোপান প্রণয়ন করা। সরকারি কলেজ এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় মাধ্যমিক পর্যায়ে জাতীয়করণ করা স্কুলের জন্য একটি যৌক্তিক আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা। সহকারী শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদে নির্দিষ্ট সময় পর শতভাগ সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা। সিনিয়র শিক্ষক পদকে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড ক্যাডার পদ করা। সরকারি কলেজের ন্যায় ৪ স্তরের গ্রেডভিত্তিক পদোন্নতি প্রথা চালু করা। চেয়ার ভিত্তিক (সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক) পদোন্নতি প্রথা বাতিল করে সরকারি কলেজের ন্যায় গ্রেড ভিত্তিক পদোন্নতি প্রথা (সহকারী প্রধান, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক, জেলা শিক্ষা অফিসরা এবং অন্যান্য পদ) চালু করা। সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের বর্তমান পদ মর্যাদার আপগ্রেডেশন করা এবং নিয়মিত পদোন্নতি প্রথা চালু করা। সিনিয়র শিক্ষক (নবম গ্রেড, গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা) পদোন্নতি বঞ্চিত ২০১০ ( অবশিষ্টাংশ) এবং ২০১১ ব্যাচের শিক্ষকদের সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা।

এ ছাড়া সরকারী হাইস্কুল শিক্ষকদের মধ্যে যারা ১২/১৫/১৮ বছর চাকরি করেও এখনো টাইম স্কেল/সিলেকশন গ্রেড অথবা উচ্চতর গ্রেড একটিও পাননি, দ্রুত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বর্তমানে চালু করা সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদের গ্রেড পরিবর্তন ও পদোন্নতির জন্য ফিডার পদের নাম পরিবর্তন করা এবং সিনিয়র শিক্ষক থেকে পরবর্তী পদোন্নতির ধাপ নির্ধারণ করা।

১৯৯৯ সালের ২২জুন মাসে নায়েমে Bangladesh National Commission for UNESCO, Ministry of Education কর্তৃক আয়োজিত “Education For the 21st Century" শীর্ষক সেমিনারে গৃহীত সুপারিশ মালায় মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও এক সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ছিল। প্রয়োজনের তাগিদে সেটি আলাদা করা হয়েছে। এখন সেটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের শতকরা ৮০ ভাগ কর্মকর্তা কলেজের জনবল হওয়ায় মাধ্যমিকের শিক্ষকরা অধিদপ্তরে কাজ করার তেমন সুযোগ পান না। তা ছাড়া মাধ্যমিকের সমস্যা সম্পর্কে তাদের বাস্তব জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাও নেই। একটি অধিদপ্তরের পক্ষে সবকিছু ভালোভাবে ম্যানেজ করা হয়ে উঠছে না। ফলে, মাধ্যমিকের শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ অন্যান্য বৈষম্যমূলক অংশগুলোর কাজ ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১২ সালে সহকারী শিক্ষকের পদটিকে বেতনস্কেল অপরিবর্তিত রেখে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ মর্যাদায় উন্নীত করা হয়।

বাংলাদেশের প্রথম পে-স্কেল গঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। সেই পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর (তখন পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক এই দুটি একই পদমর্যাদার ছিল এবং অভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ হতো। পদটি তৎকালীন সময়ে ছিল ষষ্ঠ গ্রেডভুক্ত পদ। ১৯৭৩ সালে পে-স্কেলে গ্রেড সংখ্যা ছিল ১০টি। সেই পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের সমান গ্রেডের ছিল থানা শিক্ষা অফিসার, থানা সমাজসেবা অফিসার এবং সাব-রেজিস্ট্রার পদসমূহ।

১৯৮৫ সালের পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদটি যথারীতি ১০ম গ্রেডেরই থাকে এবং ১১তম গ্রেডের সাব-রেজিস্ট্রার পদটিকে সহাকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদের সমমান (১০ম গ্রেডভুক্ত) করা হয় এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদটি যথারীতি ১১তম গ্রেডেই থাকে।কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা অফিসার পদটিকে ১১তম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ১৯৯১ সালে গঠিত পে-স্কেলে সহকারী শিক্ষক পদটি ১০গ্রেিেই বহাল রাখা হয়। কিন্তু পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি যা সহকারী শিক্ষকদের সমগ্রেডের এবং পারস্পরিক বদলিযোগ্য পদ ছিল এবং একই সঙ্গে অভিন্ন নিয়োগে নিয়োগ পেত। নবম গ্রেডভুক্ত প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদে উন্নীত করা হয় এবং পূর্বের ১১তম গ্রেডের উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটিকে এক ধাপ ওপরে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং একই পেস্কেল বর্ষে শিক্ষা কর্মকর্তা পদটিকে আরেক ধাপ ওপরে নবম গ্রেডে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদে উন্নীত করা হয়।

একইভাবে ২০০৫ সালে গঠিত পেস্কেলে সহকারী শিক্ষক পদটি যথারীতি ১০ম গ্রেডেই বহাল থাকে এবং উপরে উল্লিখিত পদসমূহ নবম গ্রেডেই বহাল থাকে। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত প্রস্তাবিত (এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে চার স্তরীয়) একাডেমিক পদসোপান দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেটি নিয়ে কাজ চলমান থাকা অবস্থায় উক্ত পদসোপানের ফাইল নাকি হারিয়ে গেছে।

২০১৫ সালে জাতীয় পে-স্কেল কার্যকরের পর সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের বেতন ভাতার পে ফিক্সেশন করতে সমস্যা দেখা দেয়। শিক্ষকরা এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা তদবির করেও ২০১৫ সালের জাতীয় পে-স্কেল কার্যকরের পূর্বের বকেয়া টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড পাননি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হলে আদালত দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৯ সালের শিক্ষকদের পাওনা বকেয়া টাইমস্কেল/সিলেকশন প্রদানের জন্য রায় প্রদান করেন। মাউশি এখনো শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা বকেয়া টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড প্রদানের জন্য অর্থ মঞ্জুরি আদেশ দেয়নি। ভুক্তভোগী প্রায় তিন হাজার শিক্ষক পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এসব বৈষম্য ও সমস্যার মূল কারণ হিসেবে বলা যায়, মাউশিতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব না থাকা।

উপরোক্ত আলাচনায় কিন্তু শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন সম্পর্কে কোনো কথা নেই। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রাপ্তি ও পেশাগত দাবি-দাওয়া আদায়ের কথা। রাষ্ট্র থেকে শিক্ষকদের প্রাপ্তিতে অবশ্যই সমর্থন করি এবং শিক্ষায় সব ধরনের বৈষম্যের অবসান হোক এটি মনে প্রাণে চাই। মাউশির চলমান প্রক্রিয়া এবং আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘসূত্রিতা পরোক্ষভাবে এটিও বলে যে, মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তর পরিচালনা করার মতো কর্মকর্তা মাধ্যমিক পর্যায়ে খুব কম কিংবা নেই। আর একটি বিষয়ও অবহেলা করা যাবে না। আর সেটি হচ্ছে কলেজ শিক্ষকরা যেভাবে সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের অবহেলা করছেন কিংবা মাউশি প্রতিনিধিত্ব করতে খুব একটি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে গুটিকয়েক (৬৮২) সরকারি স্কুলের শিক্ষকদেরই পদায়ন করা হবে, তারা আবার একইভাবে সরকারি কলেজের শিক্ষক যারা মাউশিতে আছেন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবজ্ঞা করতে থাকবেন এবং তাদের নায্য পাওনা ও দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত হতে থাকবে। সরাসরি না বললেও তারা বুঝাতে চাবেন যে, বেসরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা অযোগ্য, তারা এসব পাওনা পাওয়ার উপযুক্ত নয়। শিক্ষায় এ ধরনের বিভক্তি চলছে এবং চলতেই থাকবে হয়তো। ইনক্লুসিভ বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি না, শিক্ষার মানের যে কী অবস্থা, শিক্ষাদানের যে কী অবস্থা সেটিরও অবসান হওয়া প্রয়োজন। শ্রেণি শিক্ষক, বিষয় শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষক নেতারা সবাইকে এ বিষয়গুলোতে অধিক জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সাধারণ মানুষ ও অভিভাবকদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন। আর সেটি তখনই হবে যখন তারা দেখবেন যে, শিক্ষকরা শুধুমাত্র নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে ব্যস্ত নয়, শিক্ষার প্রকৃত উন্নয়নের কথা বলছেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন।

মাছুম বিল্লাহ: প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)

এসএন

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা