রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

যৌথ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোটং-২০২২’ প্রকাশিত হয়েছে ৩ জানুয়ারি। শিক্ষামন্ত্রী, মাউশি ও নায়েমের ডিজিসহ দেশের শিক্ষা সেক্টরের বিশেষজ্ঞসহ কিছুসংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাবিষয়ক এনজিও প্রতিনিধিদল ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউনেস্কো জেম রিপোর্টের পরিচালক ম্যানোস আন্তোনিনিস।

গবেষণার বাংলাদেশ পর্ব নিয়ে কথা বলেন ব্রাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপটমেন্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ। ইন্টারেক্টিভ সেশন পরিচালনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানটিতে আমারও থাকার সুযোগ হয়েছিল আর তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয় সরাসরি আলোচনায় অংশ নেওয়া ও অনেকের বক্তব্য শ্রবণ করতে পেরেছি। অনুষ্ঠানটি হয়েছে সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক হোটেলে।

ইউনেস্কো বলছে, করোনা মহামারির পর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে, ফলে অনেক পরিবার সন্তানের শিক্ষার খরচ জোগাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রাইভেট টিউশন, শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষাসংক্রান্ত খরচগুলো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একই। ফলে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে এটি অনেক পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে শিক্ষাখাতে বেসরকারি খাতের আধিপত্য বেশি থাকাকে পরিবারভিত্তিক শিক্ষাব্যয় বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বেসরকারি খাতের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল বাংলাদেশ। মাউশির ডিজি অবশ্য বাংলাদেশে শিক্ষার বেসরকারি খাত কথাটি পুনঃসংজ্ঞায়নের কথা বলেছেন।

তিনি বলতে চাচ্ছেন এমপিও-র মাধ্যমে শিক্ষকদের পুরো বেতন দিচ্ছে সরকার, বিদ্যালয় ভবন তৈরি করে দিচ্ছে সরকার, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টিউশন ফি নেওয়া হয় সেটিও শিক্ষকদের বাকি চাহিদা মেটাতে বিদ্যালয় রেখে দিচ্ছে। তাহলে এই বিদ্যালয়গুলোকে আমরা বেসরকারি বলব কি না প্রশ্ন রেখেছেন ডিজি।

বক্তাদের কেউ কেই বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা এক মানহীন শিক্ষায় পরিণত হয়েছে যার ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগরা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা রাষ্ট্র পরিচালিত বিদ্যালয়ের পরিবর্তে বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। জেম রিপোর্টেও চলে এসেছে যে, বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার একটা বড় অংশ এখনো কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দখলে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যাপক জাতীয়করণের পরও প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু পাঠদান নিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে। আর উচ্চশিক্ষায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি ডিগ্রি দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সব মিলিয়ে দেশের শিক্ষাখাত এখনো অনেকাংশেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠাননির্ভর। সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয় বলায় শিক্ষামন্ত্রী একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছেন যে, এবার দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মাধ্যমিক একটি অংশের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে বেসরকারি পর্যায়ে আসন সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২৫ হাজার ৭৮০। ভর্তির আবেদন পড়েছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার। আর সরকারিতে আসন সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৯০৭ জন, সেখানে আবেদন পড়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার। তার মানে বেশি শিক্ষার্থী ও বেশি অভিভাবক সরকারি বিদ্যালয়ে তাদের বাচ্চাদের পড়াতে চাচ্ছেন। এটি অবশ্য মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, প্রাথমিকে নয়।

ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বিষয়টির উপর চমৎকার এক মন্তব্য করে বলেছেন, এটি দুটি মেসেজ বহন করে। এক, সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বেশি, বিশ্বাস বেশি কারণ সরকারিতে শিক্ষার মান ভালো। তার মানে হচ্ছে, দেশে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচগুণ বাড়াতে হবে, যেটি সরকার করছে না। অন্য আর একটি মেসেজ বহন করে, সেটি হচ্ছে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের দিকে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের আগ্রহ কম। তাহলে রাষ্ট্র এখানে যে অর্থ ব্যয় করছে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।

জেম রিপোর্টের মূল উপস্থাপক বাংলাদেশ অংশের মূল উপস্থাপক ড. মনজুর আহমদ বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে যে শিক্ষা অর্থাৎ এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান বিষয়টিকে পূর্ণ অর্থবহ করতে হবে। এখানে আমিসহ আরও কেউ কেউ একই মন্তব্য করেছেন এবং একমত পোষণ করেছেন।

আলোচনায় উঠে আসে যে, কেজরিওয়াল দিল্লির শিক্ষার চেহারা বদলে দিয়েছেন। এখন সেখানে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর রাষ্ট্র পরিচালিত বিদ্যালয়ে যায়। পুরো শিক্ষার্থীবান্ধব করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে ঠিকমতো। এই ইতিহাস আমাদের জানা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাশেদা কে চৌধুরী ক্যাম্পের নির্বাহী পরিচালক। মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত টয়লেটের ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জন্য চমৎকার টয়লেট, ছিমছাম বিদ্যালয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে। আর একটি করা সম্ভব হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণের কারণে।

ড. মনজুর আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের মতো এত বিশাল বহরের শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন জেলা পর্যায় থেকেই। সবকিছু কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে শিক্ষার অগ্রগতি ও মান ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও শিক্ষার দুটি মন্ত্রণালয় নেই, শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, রিলে রেসের মতো, প্রাথমিক একটি পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা সমাপ্ত করে আর একটি স্তরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, এটি একেবারে বিচিছন্নভাবে ঘটছে না।

দক্ষিণ এশিয়ায় সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলকে প্রাধান্য দেন। মূলত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও উচ্চতার শ্রেণির প্রতীক হিসেবে তারা এস স্কুল প্রাধান্য দেন। ফলে বাড়ছে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশেও বাড়ছে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। তবে, মাধ্যমিক শিক্ষায় এ প্রবণতা বেশি। আমাদের দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুলে পড়াশুনা করে। সরকারি স্কুলের তুলনায় এনজিও পরিচালিত স্কুলে খরচ তিনগুণ বেশি, বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলোতে ৯ গুণ বেশি। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর হার ৫৫ শতাংশ, প্রাথমিক পর্যায়ে ২৪ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৪ শতাংশ এবং উচ্চ শিক্ষায় ৩৬ শতাংশ।

২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের পরিবারগুলোর জন্য ব্যয় গ্রামীণ এলাকায় ২৮-৫৪ শতাংশ, শহরাঞ্চলে তা ৪৮-৬৭ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ২০১৭-১৮ সালে ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে ঋণ করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ছয় শতাংশ পরিবার বিদ্যালয়ের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিক পড়াশুনা ও খরচ মেটায়। ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকারি ঋণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিনির্ভর লেখাপড়ার আগ্রহ বাড়ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নথিভুক্ত না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য উপবৃত্তি পায় না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা বিভিন্ন ধরনের ফির উপর বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। ভুটানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিগুণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ। তাদের শিক্ষানীতিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।

আলোচনায় উঠে আসে যে, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার অনন্য মডেল হচ্ছে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়। সেটিকে কীভাবে আরও অর্থবহ ও কার্যকারী করা যায় সেটি দেখতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও প্রাইভেট কোচিং আছে তবে এ খাতে বাংলাদেশের অভিভাবকদের ব্যয় করতে হয় সবচেয়ে বেশি। এ হার এখানে ৬৭ শতাংশ। আর গ্রামীণ এলাকায় ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হয়। শ্রীলংকায় শহরে ৬৫ শতাংশ, গ্রামে ৬২ শতাংশ, পাকিস্তানে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৪৫ শতাংশ এবং ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে।
পাকিস্তানে শিক্ষাব্যয়ের ৫৭ শতাংশ ব্যয় করে পরিবার, বাংলাদেশে এটি ৭১ শতাংশ। আমাদের শিক্ষাকে বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করার ও প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করার জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে; যেখানে পরীক্ষার পরিবর্তে শিখন-কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ শিক্ষাক্রম অনুসারে শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করবেন শিক্ষকরা। তবে, এগুলো সবই আশার কথা। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা কম থাকলেও প্রাইভেট কোচিং বন্ধ হবে কি না সেই বিষয়টি নিয়ে যৌক্তিক কারণেই অনেক অভিভাবক সন্দিহান। কারণ বিদ্যালয়ে ৮০ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য একজন শিক্ষক আর ক্লাসের সময়কাল ৪০-৪৫মিনিট। ফলে ক্লাসরুমে পাঠদান কতটা শেষ করা যাবে সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।

একজন শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থীর দিকে সরাসরি নজর দিতে পারবেন সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যেভাবে হচ্ছে সেখানেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অনেক কিছুই বোঝা সম্ভব হয় না শ্রেণিকক্ষে, তাই প্রাইভেট পড়তেই হয়। এ বিষয়গুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে অনেক কিছু শিখতে হবে এবং জানতে হবে তা না হলে শিক্ষার বিদ্যমান সমস্যা খুব একটা সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ ধরনের গবেষণার ফল আমাদের সেনসেটাইজ করে, কিন্তু সমাধান আমাদেরই বের করতে হবে।

মাছুম বিল্লাহ: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

এসএন

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা