রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

উচ্চশিক্ষা, বেকারত্ব, মানসিক সমস্যা ও আত্মহত্যা

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালনকে সামনে রেখে আঁচল ফাউন্ডেশন ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

জরিপে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত এক হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়। এদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৪৩.৯ শতাংশ ও নারী শিক্ষার্থী ৫৬.১ শতাংশ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিয়ে মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৬৭.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৩.৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ২.২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক ঝুঁকি বাড়ছে এবং আত্মহত্যার প্রবণাতও খুব বেড়েছে। ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মন খারাপ হওয়া হঠাৎ ক্লান্তি আসাসহ বিভিন্ন কারণে ভুগছেন। মোবাইল ল্যাপটপ ব্যবহারের আসক্তি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছ ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপর। অতিরিক্ত ঘুম ও নিন্দ্রাহীনতায় ভুগছেন ৭১ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিমত তারা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেছেন বা নিজেকে গুটিছে নিয়েছেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর আত্মহত্যার উপকরণ যোগাড় করেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন ৫ শতাংশ।

করোনা মহামারির কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা করোনা-পরবর্তী সময়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আগের তুলনায় ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় মনোযোগ কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশের বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, যাদের অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার মতো চরমতম পথ, যেটি উদ্বেগজনক একটি বিষয়।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা-সংক্রান্ত সমস্যা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। এতে দেখা যায়, ৪৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর করোনার আগের তুলনায় পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১০ শতাংশের বেশি ঘন ঘন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। সেমিস্টারের সময়ের চেয়ে পাঠ্যক্রমের আধিক্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী বড় কোর্স শেষ করার ফলে তা বোধগম্যের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চে শুরু হওয়া কোভিড মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট ও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে হতাশাকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন এ সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক চাপেও পড়াশুনায় অনীহা তৈরি, অভিভাবকদের চাপ, কোভিডে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘করোনা পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর একাডেমিক চাপের প্রভাব ও তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শিরোনামের ওই সমীক্ষার প্রতিবেদন তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল ওহাব। জরিপে মানসিক সুস্থতা বিষয়ক বেশ কয়েকটি নিয়ামক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে আসে কিছু ‘উদ্বেগজনক’ তথ্য। মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, কোভিড মহামারির পরবর্তী সময়ে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগে তারা জর্জরিত। পাশাপাশি দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তিসহ নানা বিষয় শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলেছে ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে আরও দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেয়াদের সেশনজটে আটকে পড়েছেন। এতে দেশের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ন্যূনতম এক বছর শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েছেন। শেষে শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নের জন্য আঁচল ফাইন্ডেশন বেশকিছু পরামর্শের কথাও উল্লেখ করে।

মানুষের মধ্যে করোনা পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশেরও বেশি উদ্বেগ ও হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারির আগে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক আটজনের মধ্যে একজন মানসিক ব্যাধি নিয়ে বসবাস করছিলেন। একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপলব্ধ পরিষেবা, দক্ষতা, তহবিলের স্বল্পতা ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। ভঙ্গুর মানসিক স্বাস্থ্যেই মূলত আত্মহত্যার জন্য দায়ী। মানসিক স্বাস্থ্যে ভাল থাকলে একজন মানুষ আত্মহত্যার দিকে পা বাড়ায় না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের ইনস্টিটিউটের এক জরিপ অনুযায়ী দেশে দুই কোটিরও বেশি মানুষ বিভিন্ন মানসিক রোগে ভুগছেন। শতাংশ হিসেবে এটি ১৬.৮। জরিপ মতে বর্তমানে দেশে ১৬.৫ কোটির বেশি মানুষের জন্য ২৭০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন। আর কাউন্সেলিংয়ের জন্য আছেন ২৫০ জন সাইকোলজিস্ট যা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে অন্যান্য কারণের সঙ্গে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, সেশনজট, অভিমান ইত্যাদি রয়েছে। গুরুতর কোনো মানসিক রোগ না থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনা বা দীর্ঘমেয়াদি আত্মহত্যার চিন্তা ছাড়াই কোনো সংকেট বা মানসিক চাপে হঠাৎ করেই ঝোঁকের বশে অনেকে আত্মহত্যা করে বা করার চেষ্টা চালায়। মানসিক চাপ, যেকোনো প্রত্যাখ্যান বা কোনো দুর্ঘটনায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতার অভাবে এমনটি ঘটতে পারে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আসায় ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাশেষে চাকরি পাওয়ার দুশ্চিন্তাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। করোনায় স্বাস্থ্যগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দুনিয়াজুড়ে যে আর্থিকক্ষতির কারণ ঘটেছে তা অতুলনীয়। দেশের শিক্ষা বিভিন্ন কারণে দিন দিন রুগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে। করোনার পরবর্তী ধাক্কা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থাপনা পুরোপুরি শিক্ষাবান্ধব নয়, আর তা করার জন্য দৃশ্যমান ও কার্যত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না— যতটা না মুখে শোনা যাচ্ছে।

এতদিন নতুন কারিকুলাম নিয়ে বেশ তোড়জোর শোনা যাচ্ছিল, ইদানিং যেন একটু থিতিয়ে পড়েছে। মহা সমারোহে বলা হলো যে, বর্তমানের যুগের উপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা আনন্দের মাধ্যমে শিখবে এবং শিক্ষার্থীরা একবিংশ শতাব্দী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমর্থ অর্জন করবে, দেশপ্রেমিক হবে। এ যুগের শিক্ষার্থীরা কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যে, দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করা দরকার সেগুলো ক্লাসরুম থেকে নেওয়ার জন্য বসে নেই। তারা দিনরাত অনলাইনে যুক্ত থেকে এগুলো শিখে নিচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় দরকার গবেষণা, দরকার বিশ্বায়নের শিক্ষা সেটির যে হাল তা দেখলে রীতিমতো অবাক হতে হয়। এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাঠিয়াল বাহিনীর দখলে, এ নিয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞানচর্চায় ও গবেষণায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব সামাজিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো সমাজেরই অংশ। সামাজিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, অশিক্ষা ও কুশিক্ষার বহিঃপ্রকাশ শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের উপর গিয়ে পড়ছে।

আমাদের তরুণ সমাজের হতাশার সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে দেশে চাকরির বাজারের সংকোচন। এ সব তরুণদের উদ্যোক্তা বানানোর কথা শোনা গেলেও বাস্তব তার বিপরীত। কেউ কেউ নিজ প্রচেষ্টায় ‘আউটসোর্সিং মার্কেটে ঢুকেছে তাও এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণ বিসিএস পরীক্ষামুখী। এ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হচ্ছে কারণ টেকনিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী যাদের উপার্জন ভালই করার কথা, যারা দেশকে অন্যভাবে সেবা দিতে পারতেন তারাও ছুটছে বিসিএসের পেছনে। বিসিএসে না হলে আবার হতাশা। হতাশা যেন কাটছেই না। জনসংখ্যার লাগামহীন উর্ধ্বগতির একটা স্তরে এসে বাংলাদেশ একটা সুবিধাজনক স্তরে প্রবেশ করেছিল, সেটি হচ্ছে তরুণ সমাজ এখন সবচেয়ে বেশি। জনশুমারি ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৯ শতাংশ তরুণ, ২৮ শতাংশ শিশু এবং মোট কর্মক্ষম মানুষ হচ্ছে ৬৫.৫১ শতাংশ। এই সংখ্যা আমাদের শক্তি হতে পারত কিন্তু তা না হয়ে দিন দিন দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার মধ্যে পড়েছে দেশ। এই হতাশা তরুণ থেকে মধ্যবয়সী সবার মধ্যে। সরকার না পারছে জনসংখ্যা সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে, না পারছে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে। টেকসই উন্নয়নের জন্য জনশক্তির যে উন্নয়ন সেটি আমাদের উন্নয়ন সংজ্ঞাতে সেভাবে নেই।

এখন ধরে নেওয়া হয় যে, চাকরিতে গিয়ে শিখবে। আর এ কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর কম। অনেকের ভাবনা— কোনো রকম একটি কাগজ বা সনদ যোগাড় করতে পারলেই হলো। শিক্ষা দীক্ষা যা কিছু দরকার সবকিছু চাকরিতে ঢুকে করবে। এই চিন্তা হলে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কমে যায়, আর যাচ্ছেও তাই। বেসরকারি চাকরি পেতে হলে, আর পাওয়ার পর টিকে থাকতে হলে বর্তমান যুগের স্কীলগুলো অর্জন করতেই হবে। আর অ্যানালাইটিক্যাল রিজনিং অর্জন করা প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের। পিপল, ইমেজ আর প্রফিট চক্রটি কিন্তু এখন বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানে একটি ব্রান্ডিং। যার অর্থ হচ্ছে একজন দক্ষ কর্মী কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড। বাইরে তার পরিচিতিই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড। আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সেভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন কিন্তু চাকরিক্ষেত্র নতুন এক বাঁধা— পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা।

চাকরির জন্য যে সফট স্কিল প্রয়োজন সেটি কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই সঠিকভাবে শেখায় না। অনেক শিক্ষার্থীই মেইল করতে পারে না, ইংরেজিতে দুর্বল অর্থাৎ ইংরেজি ব্যবহার করে নিজ সম্পর্কে বলা বা লেখায় অপারগ। মাত্র হাতেগোনা দু’একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরির চেষ্টা করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এদিকে ভ্রক্ষেপ নেই। সেখানে দলাদলি আর লাঠালাঠির সমস্যা মেটাতেই প্রশাসন ব্যস্ত। এতে ভবিষ্যতে যে আরও হতাশা বাড়বে সে বিষয়টিও কেউ ভেবে দেখছেন না।

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং সাবেক শিক্ষক, ক্যাডেট কলেজ, রাজউক কলেজ ও বাউবি

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা