রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

মারুফুল ইসলাম

একগুচ্ছ কবিতা

মা

তিনরাত ধরে ঘুমোয়নি মা একবারও
তিনদিন মুখে দেয়নি একনলা ভাত
আহারে তার নাড়িছেঁড়া কলিজার টুকরা
মাটির নিচে একা একা কী জানি কী করে
তার কি আর নাওয়া-খাওয়া-ঘুম আছে
নয়নমণি ছেলেকে অন্ধকারে অভুক্ত রেখে
দুঃখিনি মার গলা দিয়ে কী করে নামবে ভাতের দলা

শহরে যেতে চাইত না ছেলেটা
ছোটবেলায় বাপ হারিয়ে কেমন যেন সারাক্ষণ মার বুকে লেপ্টে থাকত
যত কথা, যত গল্প, যত গান সব তার মার সাথে
যত সাধ আহ্লাদ রাগ অভিমান মার সাথে
গোসল করতে গেলেও মাকে বসে থাকতে হয় পুকুরপাড়ে
তিনবেলা ভাত খায় মার হাতেই
অন্যেরা যত হাসাহাসি করে
সে তার মার পেটের ভেতরে আরও ঢুকে পড়ে
ঘুমের মধ্যেও মা
স্বপ্নেও
মা তার পৃথিবী
মা ছাড়া তার আর কেইবা আছে ত্রিভুবনে

কোনো মারামারি ঝগড়াঝাঁটি নেই
কোনো নালিশ নেই
ইশকুলের শিক্ষকেরা বরং দেখা হলে বলত
সোনার টুকরো ছেলে
একদিন গাঁয়ের নাম উজ্জ্বল করবে
মায়ের দুঃখ দূর করবে
হায়রে বাপধন
জন্মদুঃখিনি মায়েরে এ তুই কোন চিরদু:খের সায়রে ভাসিয়ে দিয়ে গেলি রে জাদু

ইশকুলের পরীক্ষায় যখন ভালো ফল করল
সবাই যখন মিষ্টি খেতে চাইল
ছেলের মাথায় হাত রেখে অগোচরে থুতু দিয়ে
আল্লাহর দরবারে আদায় করল হাজার শুকরিয়া
বলল
যা শহরে যা
সবগুলো পাস দিয়ে তুই বড় হ
ওই বটগাছটার চাইতেও বড়

প্রথমবার শহর থেকে ফিরে এসে ছেলের
কত গল্প কত গল্প রাতভর
বলে
মাকে শহরে নিয়ে যাবে
এই দেখাবে
ওই দেখাবে
এটা খাওয়াবে
ওটা খাওয়াবে
বড় বড় গাড়ি চড়াবে
হায় খোদা
সে আর কী গাড়ি চড়বে
এই বড় গাড়িই তো তার বুকের পাঁজরের ওপর দিয়ে ছুটে গেল
কেড়ে নিয়ে গেল বুকের ধন
একাকিনী মায়ের একমাত্র সোনামানিক

মার দুচোখে এখন কোনো জীবন নেই
জগত নেই
সংসার নেই
দিনদুনিয়া নেই
বেহেশত-দোজখ নেই
স্বদেশ নেই
ধর্ম নেই
মানুষ নেই

এ-সমাজ
এ-সময়
এ-প্রতিবেশ
এ-বিধিব্যবস্থা
গাড়িচাপা দিয়েছে মার সবেধন নীলমণি সন্তান
কবরচাপা দিয়েছে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ
আর জীবন্ত কবর দিয়েছে মাকে

আকাশে ধ্রুবতারা ঠায় জেগে থাকে
জেগে থাকে অতন্দ্র কালপুরুষ
নির্নিমেষ জেগে থাকে নীহারিকা
সেই সাথে জেগে থাকে মা
মার চোখে ঘুম নেই
থাকতে পারে না

হে মানুষ
হে আদিমাতার সন্ততি
হে মায়ের গর্ভজাত সন্তান
তোমাদের মায়ের কসম
সাবধান
তোমরা আর কোনো মার বুক খালি করো না

 

শামিল

আমার মেয়েটাকে আমি মাঝেমধ্যে স্কুলে দিয়ে আসি
কখনো কখনো নিয়ে আসি
গাড়িটা যেখানে রাখি সেখানে কিছু ফেরিওয়ালা ঠেলাওয়ালা সওদাপাতি নিয়ে আসে
ক্রেতা আর বিক্রেতার হুড়োহুড়ি
ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের ত্রস্ততা
স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী আর কমিউনিটি পুলিশের ব্যস্ততা
যানজট আর ড্রাইভারদের ঝামেলা
এসবের বাইরে কয়েকটা ফুটফুটে বাচ্ছা ছুটে ছুটে আসে
চকচকে চোখে হাত পাতে

ওরা স্কুলের বাইরের ছেলেমেয়ে
স্বদেশ ওদের দায়িত্ব নেয় না
স্বজাতি ওদের দায়িত্ব নেয় না
স্বধর্ম ওদের দায়িত্ব নেয় না
স্বকাল ওদের দায়িত্ব নেয় না

ওদের মৌলিক চাহিদা আছে
কিন্ত মৌলিক অধিকার নেই
ওদের বর্ণ আছে
কিন্তু বর্ণমালা নেই
ওদের শরীর আছে
কিন্তু নিরাপত্তা নেই
ওদের ধর্ম আছে
কিন্তু পূণ্য নেই
ওদের সমাজ আছে
কিন্তু স্বীকৃতি নেই
ওদের প্রশ্ন আছে
কিন্তু কোনো উত্তর নেই

ওরা যৌবনের ধর্ম বোঝার আগেই ধর্ষিতা হয়
বিয়ের ফুল ফোটার আগেই ওদের গর্ভে ফোটে মাতৃত্বের ফুল
ভুলশুদ্ধ বোঝার আগেই ওদের অবরুদ্ধ জীবন মিশে যায় চিহ্নহীন মৃত্তিকায়

তবু ওরা আছে
তবু ওরা আসে
তবু ওরা থাকে
তবু ওরা ডাকে

আমরা কি শুনতে পাই ওদের আহ্বান
যে-আহ্বানে পাখপাখালি আর মেঘের সঙ্গে
উড়ে যায় আদিগন্ত সবুজ ধানখেত আর
দিগন্তহীন সুনীল আকাশ
যে-আহ্বানে পুবের আলো ধেয়ে যায় পশ্চিমের অন্ধকারের অভিমুখে
যে-আহ্বানে একটি মানুষ হয়ে যায় ষোলো কোটি মানুষ
আর ষোলো কোটি মানুষ হয়ে যায় ছয়শো কোটি মানুষ
যে-আহ্বানে দুমড়েমুচড়ে যায় উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু

উত্তরাধিকারের সত্য নিয়ে ওরা যখন আমার দিকে অবিনাশী চোখ মেলে তাকায়
তখন আমি আমার মেয়ের দুচোখে তাকিয়ে দেখতে পাই
আদিহীন অন্তহীন অস্তিত্বের একটি মিছিল
আর সেই মিছিলে আমিও আমার সর্বসত্তা নিয়ে শামিল
চিরদিন বিকল্পবিহীন

 

জেলখানার নয়া চিঠি

ভোরের বাতাসে ভেজা গন্ধ
কারাগারের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের আজান
কিন্তু কোন আহ্বানে সাড়া দেবে
ছাব্বিশ বসন্তের পারস্য গোলাপ রেহানে জাবারি
ওদিকে যে ওকে ডাকছে মৃত্যু
ফাঁসির রজ্জু

তুমি তো জানতে, মা
আমি মরতে যাচ্ছি
তবু ফাঁসির রায় শোনানোর পর কেন
তোমার আর বাবার হাতে আমাকে চুমু খেতে দাওনি, মা

মৃত্যুর চৌকাঠে বসে মাকে লিখছে রেহানে
জেলখানা থেকে শেষ চিঠি

মাগো, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি
কিন্তু এই পুরুষ-পৃথিবী তোমাকে আমাকে ভালোবাসেনি
চায়নি আমরা সুখী হই
নারীদের সুখ চাইতে নেই
অথচ তুমিই তো শিখিয়েছ, মা
শত বিপর্যয়েও আমি যেন কখনোই নারীত্ব বিসর্জন না দেই
আমি যেন চালিয়ে যাই লড়াই

আমার তো সেই মুহূর্তেই মরে যাওয়ার কথা ছিল
ধর্ষণের পর আমার খুন হওয়ার কথা ছিল
আমার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত ভোগ-উচ্ছিষ্ট শরীরের পড়ে থাকার কথা ছিল
শহরতলীর নর্দমায়
এই পৃথিবী কবেইবা মেনে নিয়েছে সেই নারীকে
যে নিজেকে বাঁচাতে পুরুষের বুকে বসিয়ে দেয় ছুরি
তাই আমাকে ছুড়ে দেওয়া হলো
দুঃসহ কয়েদখানার এই নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে

ওরা বলে, আমি ঠাণ্ডা মাথার পরিপাটি খুনি
তুমি তো জানো, মা
এর আগে আমি কোনোদিন
একটা মশা কিংবা আরশোলাও মারিনি
অথচ ওরা আমাকে দিল মৃত্যুদণ্ড
তবু এ নিয়ে কোনো অনুযোগ নেই
কেননা একটা মৃত্যুতেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না

যেহেতু আমি নিজেকে তুলে দেইনি পুরুষের ভোগে
যেহেতু আমি চোখ থেকে ঝরাইনি একটি ফোঁটাও জল
যেহেতু আদালতে আমি ছিলাম আগাগোড়া নিরুত্তাপ
যেহেতু আমি করিনি নতমস্তক প্রাণভিক্ষা
তাই বিচার বিভাগের কাছে মনে হলো
মনে মনে আমি পুরুষালি
অথচ আমার হাতের তালু কী নরম তুলতুলে
লম্বা নখে কী দারুণ জেল্লা
আর আমি কোন দুঃখেইবা হতে যাব হতচ্ছাড়া পুরুষালি
আমি তো তোমার কাছেই আবিষ্কার করতে শিখেছি, মা
নারীত্বের অপাপবিদ্ধ সৌন্দর্য
তবু আমার মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হলো নির্জন কারাবাস
নারীত্বের কী নির্মম পুরস্কার
হায় আইনের প্রতি আমার কী সুগভীর আস্থাই না ছিল

তুমিই তো বলেছ, মা
সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে অধ্যবসায় প্রয়োজন
তাকিয়ে দেখো সেইসব পুলিশের দিকে
আইনজীবীর দিকে
বিচারকের দিকে
যারা আমার অধিকার পিষে দিয়েছে বুটের নিচে
মিথ্যে আর অজ্ঞানতার কুয়াশায় আড়াল করেছে সত্য
ওরা কি জানে না, মা
চোখের সামনে থাকলেই সব সত্যি হয়ে যায় না

তাই বুঝি মিথ্যে হয়ে যায় অপমৃত্যু
আর হাজার হাজার বছরের অন্যায়-অবিচারের মুখোমুখি
সত্যি হয়ে ওঠে জেলখানার নয়াচিঠি

 

বৃষ্টি

মা খুব বৃষ্টিতে ভিজত সুযোগে পেলেই
রিকশায় রাস্তায় ছাদে উঠোনে
বারান্দায় বা জানালায় যতটুকু পারত ছাঁট লাগাত
বাবা ওরকম ভিজতে চাইত না
তবে ভালোবাসত বৃষ্টি
মাঝেমধ্যে বাড়িয়ে দিত হাত
ইচ্ছে ছিল একটা কবিতার বই লিখবে
নাম দেবে
বৃষ্টি

ওদের দুজনের ঘরে জৈষ্ঠ্যের খটখটে রাতে
বৃষ্টি এলো
ওদের মেয়ে
নাম রাখল
বৃষ্টি

ফুটফুটে মেয়েটা কাঁদত না একদম
জন্মের পর বহু কষ্টে কাঁদাতে হয়েছে
মা দুধ দিতে ভুলে গেলেও কাঁদত না
বিছানা থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে গেলেও না
এমনকি পাশের বাড়ির দুষ্টু ছেলেটা এসে সবার চোখের আড়ালে জোরে চিমটি কাটলেও
ঠোঁট জোড়া একটুকু ফুলে উঠত কেবল
কিছুতেই কাঁদতে চাইত না একেবারে

বড় হয়ে মেয়েটা বৃষ্টি হতে চেয়েছিল
সবাইকে বলত
আমি একদিন ঠিক সত্যি সত্যি বৃষ্টি হয়ে যাব

বগুড়া থেকে ঢাকাগামী রাতের বাসটা খালি হয়ে গেল মাঝপথে
যাত্রী বৃষ্টি একা
কাল সকালেই তার চাকরির পরীক্ষা গুলশানে
বাসের ভেতরে ও বাইরে ভাদ্রের গরম
চালক আর সহযোগী মিলে তিনজন

সকালে ওর মৃতদেহ পাওয়া গেল ভাওয়ালের বনে
চরাচরে বৃষ্টির ক্রন্দন
বৃষ্টি নামের মেয়েটা সত্যি সত্যি বৃষ্টি হতে চেয়েছিল

 

স্বাধীনতার পুঁথি

এলো আবার ফিরে
এলো আবার ফিরে বছর ঘুরে স্বাধীনতার দিনটা
বুকের মধ্যে কাঁপন তোলে বঙ্গবন্ধুর ঋণটা

আহা সাতই মার্চে
আহা সাতই মার্চে বজ্রকণ্ঠে ঐতিহাসিক ভাষণ
তাসের ঘরের মতো ধসে পাকিস্তানের শাসন

ভুট্টো ইয়াহিয়া
ভুট্টো ইয়াহিয়া টিক্কা খানে ফন্দি ফিকির করে
আগুন ধরায় বাংলাদেশের লাখো লাখো ঘরে

মারে সোনার ছেলে
মারে সোনার ছেলে গুলি করে শহীদ তিরিশ লক্ষ
আজও কাঁদে বাংলা মায়ের রক্তঝরা বক্ষ

তবু লড়াই করে
তবু লড়াই করে বীর বাঙালি অশ্রু মুছে হাতে
লড়াই চলে বাঁচামরার দিনে এবং রাতে

সুর্য ওঠে নামে
সুর্য ওঠে নামে চাঁদের কান্না জোছনা হয়ে ঝরে
নদীর বুকে জোয়ার জাগে সোহাগে আদরে

মাথা তোলে পাহাড়
মাথা তোলে পাহাড় ঝরনা ঝরে সাগর গর্জে ওঠে
রক্তজবা কৃষ্ণচূড়া রুদ্রপলাশ ফোটে

বাজে অগ্নিবীণা
বাজে অগ্নিবীণা বিষের বাঁশি ছোটে বাঁধনহারা
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বোঝেনি কুত্তারা

ওরা মানুষ তো নয়
ওরা মানুষ তো নয় পাকিস্তানি জানোয়ার হায়েনা
প্রাণ দিয়ে পেয়েছি বাংলা রক্ত দিয়ে কেনা

অমর একাত্তরে
অমর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংকটে সংগ্রামে
সাত কোটি বাঙালি লড়ে বঙ্গবন্ধুর নামে

লক্ষ্য স্বাধীনতা
লক্ষ্য স্বাধীনতা স্বাধীন বাংলা সোনার বাংলা ভাইরে
মার্চ মাসের এই ছাব্বিশ তারিখ ঘোষণা তার পাইরে

মুক্তিযুদ্ধ চলে
মুক্তিযুদ্ধ চলে জীবনমরণ দীর্ঘ ন মাস ধরে
অবশেষে বিজয় পেলাম ষোলোই ডিসেম্বরে

আজকে বাংলাদেশে
আজকে বাংলাদেশে কোকিল ডাকে সোনায় মোড়া ভোরে
প্রাণের আলোয় নাম লিখেছি হৃদয়ে অন্তরে

আমার সোনার বাংলা
আমার সোনার বাংলা তোমার মাটি
সোনার চাইতে খাঁটি
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ মাথা তুলে হাঁটি

আমার দেশের মাটি
আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথাখানি
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেই বাংলাদেশের বাণী

সকল কিছুর ঊর্ধ্বে
সকল কিছুর ঊর্ধ্বে জানি সবাই একটাই মর্মকথা
সবার ওপর মানুষ সত্য, সত্য মানবতা

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সিন্ধুর উপনদী ঝিলামে অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে ভারত। এর ফলেই হঠাৎ করেই মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো মানুষ।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরবাদের বিভাগীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ঝিলাম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পানি ছাড়ছে ভারত। ফলে নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দুনিয়া নিউজ’ জানায়, ভারত কোনো ধরনের আগাম বার্তা না দিয়েই শনিবার সকাল থেকে বাড়িয়ে দেয় পানির প্রবাহ। এতে করে অনন্তনাগ অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানি চাকোঠি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। মসজিদের মাইকে সতর্কতা প্রচার করা হয়, স্থানীয়দের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। তবে সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির নেতারাও। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।”

এদিকে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী জানালেন, পানির প্রবাহ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড্রেজিং করে পানির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা