সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতির প্রতি অক্ষয় ভালোবাসা

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণ যোগাযোগ বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক প্রয়োগের এক বিস্ময়কর ঘটনা। যোগাযোগ বিষয়ে আধুনিক নিয়ম-কানুনের এক আশ্চর্য প্রতিফলন ঘটেছে এ ঐতিহাসিক ভাষণে।

প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮ থেকে ৬০টি শব্দ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে এ কালজয়ী ভাষণটি শেষ করেছিলেন। সম্প্রচারতত্ত্বে প্রতি মিনিটে ৬০ শব্দের উচ্চারণ একটি আদর্শ হিসাব। ১ হাজার ১০৭ সাতটি শব্দের এ ভাষণে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই, কোনো বাহুল্য নেই আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম। তবে দুয়েকটি স্থানে পুনরাবৃত্তি বক্তব্যের অন্তর্লীন তাৎপর্যকে বেগবান করেছে।

ভাষণের সূচনাপর্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ অত্যন্ত কার্যকর বক্তব্যের অবতরণিকা যা পুরো মূলভিত্তি তৈরি করেছে ও শ্রোতাকুলকে অভ্যুদিত বক্তব্যের আভাস দিচ্ছে।

পুরো বক্তব্যের আধেয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মূলত পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয়বার্তা ও তার স্বাভাবিক অনুযাত্রায় পাকিস্তানের তদানীন্তন রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্বাঞ্চলের পরিসমাপ্তির প্রজ্ঞপ্তি ও বিবরণী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও মূলসূত্র ৭ মার্চের এ ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এ ভাষণ ছিল আমাদের সিংহনাদ বা যুদ্ধশ্লোগান। শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সকলের গায়ের রোম খাড়া হয়ে যেত এ ভাষণ শ্রবণে। বঙ্গবন্ধু স্বকণ্ঠে সাড়ে সাতকোটি বাঙালিকে শুধু ঐক্যবদ্ধই করেনি, মাত্র আঠার দিন পর তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। কারণ, এ ভাষণই ছিল কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না’- বঙ্গবন্ধুর এই উচ্চারণ প্রসঙ্গে প্রয়াত সাংবাদিক-সম্পাদক কামাল লোহানী বলেছিলেন, ‘সংসদীয় রাজনীতির অঙ্গনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এই বলিষ্ঠতা একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই দেখাতে পেরেছিলেন বলে তিনি জাতিরাষ্ট্র-একইসঙ্গে মুক্তিদাতা হিসেবে মহত্ত্ব অর্জন করেছিলেন।’

জনযোগাযোগে যেসব ব্যবহার করার কথা তা অত্যন্ত সঠিকভাবে সুপ্রযুক্ত হয়েছে ভাষণে। বাংলাদেশের জন্মের প্রাক্কালে বাংলার জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতার সংলাপ ভাষণ। প্রাঞ্জল কথোপকথনের ভঙ্গিমায় অতি সহজ সাবলীল ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে রচিত এ ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার মূল দলিল। শ্রোতাকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে তিনি সংলাপের বাচনশৈলী অনুসরণ করেছিলেন অত্যন্ত সূচারুভাবে। ভাষণে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। সরাসরি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন পাঁচটি: কী অন্যায় করেছিলাম? কী পেলাম আমরা? কিসের আর.টি.সি.? কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব?

বক্তার সঙ্গে শ্রোতার মেলবন্ধন সৃষ্টিতে পরামর্শের সুপ্রয়োগ ঘটেছে এ ভাষণে। পুরো ভাষণে বর্তমানকালের যৌক্তিক ব্যবহার ভাষণে সজীবতা দিয়েছে। আবার কথোপকথনের ধারার স্বার্থে তিনি অতীত ও ভবিষ্যৎকালের সুন্দর সংমিশ্রণও ঘটিয়েছেন এ ভাষণে।

ভাষণে যেসব অংশে বঙ্গবন্ধু আদেশ, নির্দেশ বা সতর্ক সংকেত দিচ্ছেন সেসব স্থানে বাক্যগুলো স্বাভাবিকভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বহু গবেষণার পর যোগাযোগতাত্ত্বিকদের বাক্য সংক্ষিপ্ত করার বর্তমান নির্দেশিকা বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যথাযথ প্রতিফলিত। ভাষণ থেকে কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, ‘২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন’; ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’; ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি: আমি যা বলি তা মানতে হবে’; ‘যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না; ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’।

রাষ্ট্রনায়কোচিত ও কর্তৃত্বব্যঞ্জক ভাষণের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভবিষ্যৎ কর্মোদ্যোগ, কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে শ্রোতাদের শুধু পরিচিতি করানোই নয়, বরং তাদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে উদবুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করা। বঙ্গবন্ধু কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে সাধন করেছিলেন তার এ ভাষণের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর প্রোৎসাহমূলক বক্তব্য ‘তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ সাড়ে সাতকোটি বাঙালি এ বক্তব্যকেই হুকুমনামারও অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাদেশ বলে সেদিন গ্রহণ করেছিলেন।

মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণের সময়ও তার মানবিক উদারতার কোনো হেরফের কখনো যে ঘটেনি তার পৃকৃষ্ট প্রমাণ ৭ মার্চের ভাষণ। রাষ্ট্রের জন্মমৃত্যুর সংযোগস্থলে দাঁড়িয়েও তিনি ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই আবার আশ্বাসবাণী উচ্চারণ করেন ‘তোমরা আমার ভাই তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপরে গুলি চালাবার চেষ্টা করো না।’ কঠিনের সঙ্গে কোমলের এমন সহাবস্থান উদার-হৃদয় বঙ্গবন্ধুর মাঝে সর্বদাই বিদ্যমান ছিল।

যথাযথ তথ্য চয়নের ফলে ভাষণটি অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠ হয়েছে, আর তীক্ষ যুক্তিবিন্যাসের কারণে শ্রোতাদের মাঝে তীব্র প্রণোদনা সঞ্চারে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘যে আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী-র্আত মানুষের মধ্যে। তার বুকের উপর গুলি হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ, আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’ সহজ ভাষায় এ ধরনের জোরালো যুক্তিবাদ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের এক সহজাত বিশেষত্ব। বক্তব্যের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ভাষণের মাঝামাঝি এসে সূচনা বক্তব্যের সম্প্রসারণ বা পুনরাবৃত্তির কথা বলা হয় যোগাযোগ বিজ্ঞানে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আশ্চর্যজনকভাবে এ দিকটিও প্রতিভাসিত যখন তিনি ভাষণের মাঝামাঝি এসে বলেন, ‘তাকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপরে গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।’

সর্বজনীন বক্তব্যে ও জনযোগাযোগে কার্যকর ফল লাভের জন্য চ্যালেঞ্জ উত্থাপন সর্বজনবিদিত একটি পদ্ধতি। বঙ্গবন্ধু ভাষণের শেষ পর্যায়ে এসে যখন বলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব-এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইন্শালাহ’ তখন বোঝা যায় যে তিনি যোগাযোগবিদ্যার শিল্পকুশল প্রণালীতে পরম দক্ষতায় কীভাবে শ্রোতাদের বক্তব্যের সঙ্গে গেঁথে ফেলেছেন।
যেকোনো ভাষণের সংজ্ঞানির্ধারণী অংশ সাধারণত শেষেই উচ্চারিত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে যোগাযোগবিদদের আধুনিক অভিমত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শেষবাক্য ‘এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ অত্যন্ত দৃঢ়প্রত্যয়ে ব্যক্ত স্বাধীনতার কার্যত ঘোষণা যা ৭ মার্চের ভাষণের সংজ্ঞা হিসেবে স্বীকৃত। যে প্রক্রিয়ায় তিনি ভাষণ শেষ করেছেন তা যোগাযোগবিদ্যার পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, যেখানে বলা হয় আমরা প্রায়ই ‘পরিশেষে বলছি’, ‘একটি কথা বলেই শেষ করছি’ বা ‘পরিশেষে এ কথাটি না বললেই নয়’ ইত্যাদি ভূমিকা করে বক্তব্য শেষ করি।

কিন্তু এই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সরাসরি এ প্রবেশ করেছেন যা আধুনিক তত্ত্বের যথাযথ প্রয়োগ এবং যা ছিল পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে অকল্পনীয়।
আমরা জানি যে, বলিষ্ঠ বক্তব্য সর্বদাই সংক্ষিপ্ত হয়। একাত্তরের ৭ মার্চ তারিখে প্রদত্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তট-অতিক্রমী ভাষণ তেজস্বী ভাষণের এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। একটি ভাষণ একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে কী দারুণভাবে উৎসাহিত করেছিল তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ কণ্ঠস্বরসংবলিত এ ভাষণের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও সময়োপযোগিতা বিশ্লেষণ গবেষকদের জন্য এক স্বর্ণখনি।

এ ভাষণ বাঙালিকে যেভাবে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উদ্দীপ্ত ও দীক্ষিত করেছিল তা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছে নতুন এক আলেখ্য। সার্বজনিক বিশারদ, গবেষক ও যোগাযোগবিদদের জন্য এ ঐতিহাসিক ভাষণ একটি আবশ্যকি পাঠক্রম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। আমাদের বঙ্গবন্ধুর নিন্মোক্ত মূল্যবান উক্তি উল্লেখ করে আমি জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি।
‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েইে আমি ভাবি একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তত্বিকে র্অথবহ করে তোলে।’

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Header Ad
Header Ad

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!

ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় ভারতীয় সেনারা সবসময়ই বিজয়ী। কখনো পাকিস্তানি ঘাঁটি ধ্বংস, কখনো আফগানিস্তানে অভিযান—সবখানেই তারা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় জয়ী। তবে বাস্তবতা যে এতটা সহজ নয়, তা কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় আবারও স্পষ্ট হলো।

এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ জন। অথচ হামলা ঠেকাতে বা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি ভারতীয় সেনারা। হামলার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে তারা। ঘটনাটির রেশে সীমান্তে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, ভারী অস্ত্রসহ মোতায়েন করা হয়েছে সেনা, মাঝেমধ্যেই হচ্ছে গোলাগুলি।

নেটিজেনরা বলিউড সিনেমার বাহাদুর সেনাদের সঙ্গে বাস্তবের ব্যর্থ ভারতীয় সেনাদের তুলনা করে রীতিমতো ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে। সিনেমার মতো বাস্তবে অজয় দেবগান বা অক্ষয় কুমারের মতো নায়কোচিত সেনা যে নেই, তা এখন স্পষ্ট।

কেবল স্থলবাহিনী নয়, বিমানবাহিনীর ব্যর্থতাও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীর হামলার পর পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী ভুল করে নিজের দেশের একটি বাড়ির ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ও প্রতিবেদন সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনারা যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। হামলার ২০ মিনিট পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন হামলাকারীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় মিগ-২১ নিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের ঘটনাও আবার আলোচনায় এসেছে। সেবার তার বিমান ভূপাতিত হয় এবং তাকে আটক করে পাকিস্তান পরে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

নেটিজেনরা বলছেন, বলিউডের সিনেমার কল্প-কাহিনীর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুদ্ধ লাগলে তা হবে সমান শক্তির লড়াই, সিনেমার মতো একপাক্ষিক নয়। অধিকাংশই আবার যুদ্ধের বিপক্ষে মত দিয়েছেন, মানবিক বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়ে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বলিউডের রঙিন পর্দায় ভারতীয় সেনারা 'অপরাজেয়' হলেও বাস্তবে কাশ্মীর হামলার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, বাস্তব যুদ্ধ সিনেমার গল্পের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বরুড়া ও মুরাদনগরে পৃথক দুইটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়।

জানাযায়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে সোমবার দুপুরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত দুইজন বড়হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন পয়ালগছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বিপ্লব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘের মধ্যে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহত কিশোর দুজন হলেন পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন(১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে দু স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একজন। হাসপাতাল থেকে নিহত দুজনের লাশ স্বজনরা বাড়িয়ে নিয়ে যান।

অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে জমির ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের মৃত বীরচরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬৪) ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসীম উদ্দীন ভুইয়ার ছেলে জুয়েল ভুঁইয়া (৩০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে পাশাপাশি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়। পরে তাদেরকে আশেপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে দেখে তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বর্তমানে দুজনের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে আছে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে তারা ঘটনাটি জানতে পারেন। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা